ধৃত মোর্চা কর্মী, অনশনের হুমকি তামাঙ্গের
শীতের মুখেই সম্পর্কের শৈত্য কেটেছে। তারপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় ছাড়ার পরে ফের সামান্য সুর চড়িয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তৃণমূল ও মোর্চা যে এই ভাবেই একে অপরের উপরে চাপ বজায় রেখে চলবে, তা বোঝা গেল সোমবারেও।
মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ এ দিন রাজনৈতিক জমি ফের শক্ত করতে ঘাঁটি গেড়েছেন কার্শিয়াঙে। জেলবন্দি দলীয় কর্মীদের মুক্তির দাবিতে অনশনের হুমকি দিয়েছেন গুরুঙ্গ ঘনিষ্ঠ নেতা বিনয় তামাঙ্গ। রাজ্যও তেমনই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে, পাহাড়ে শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কড়া হাতেই মোকাবিলা করা হবে। তৃণমূল নেতার বাড়িতে আগুন ধরানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোর্চার ২০ নেতাকর্মীকে এ দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রথমে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় এবং তারপরে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কার্শিয়াঙে সভা করেছেন। দু’টি সভাতেই খুব ভিড় হয়। বহু মোর্চা কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগও দেন। তাই এখানে ফের পায়ের তলার জমি শক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন গুরুঙ্গ। দুপুরে সেখানে পৌঁছে মোর্চা সভাপতি ঘোষণা করেছেন, “আমি ক’দিন কার্শিয়াঙে থাকব। দলের সব শাখার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। সব শাখা পুনর্গঠন করা হবে।” প্রায় একই সময়ে দার্জিলিং আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে গুরুঙ্গের একান্ত ঘনিষ্ঠ নেতা তথা জেলবন্দি তামাঙ্গ জেলেই অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “জেলবন্দি সব নেতা-কর্মীদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে ৩০ অক্টোবর থেকে অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন না। তবুও আমি অনশন করতে চাই।” সেই সঙ্গে তাঁদের নেতা-কর্মীদের নানা মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ অব্যাহত বলেও মোর্চার শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেছেন। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি রাইয়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের উস্কানিতে আমাদের নেতা-কর্মীদের মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। যা মেনে নেওয়া যায় না।”
রাজ্য সরকার কিন্তু এ দিনও বুঝিয়ে দিয়েছে, পাহাড়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁরা কোনও ভাবেই নরম হবে না। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে পাহাড়ের নানা এলাকা থেকে ১০ জন মোর্চা নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের সন্দেহ, ধৃতেরা শনিবার গভীর রাতে দার্জিলিং থানার সিংবুঙ্গ এলাকার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের পাহাড় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিত সুনদাসের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় যুক্ত।
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ধৃতদের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” প্রসঙ্গত, বর্তমানে তামাঙ্গ সহ ৯ জন জিটিএ সদস্য জেলে বন্দি। তাঁদের মধ্যে একাধিক মামলায় জামিন না পাওয়ায় তামাঙ্গ এখনও জলপাইগুড়ি জেলে বন্দি।
মোর্চা-তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখে ফের পাহাড়ে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে আসরে নেমেও খানিকটা হলেও পিছু হটতে হয়েছে জিএনএলএফকে। এ দিন জিএনএলএফের দার্জিলিং জজবাজারের অফিসটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৩ দিন আগে ওই অফিস খোলার কথা ঘোষণা করে জিএনএলএফ। কিন্তু ওই বাড়ির মালিক এদিন অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছেন। বাড়ির মালিকের অভিযোগ, মুরগির ব্যবসা করার কথা বলে ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখানে পার্টি অফিস খোলা হয়েছে দেখে তিনি তা বন্ধ করে দিয়েছেন। জিএনএলএফের দার্জিলিং শাখার আহ্বায়ক এম জি সুব্বা বলেন, “বাড়ির মালিকের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তা-ই অফিসটি বন্ধ হয়েছে। শীঘ্রই দার্জিলিঙের অন্য কোথাও অফিস খুলব।”
তবে রাজ্য এবং মোর্চার মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়ে পাহাড়ে অবস্থার যে উন্নতি হয়েছে, তাকে ফের স্বাগত জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। কিন্তু এর জন্য কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হলে পরিস্থিতি ফের জটিল হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সঙ্গেই সূর্যবাবুর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, তিনি রাফ অ্যান্ড টাফ! আমরা বারবার বলছি, এই সব পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে টাফ হতে হয়। রাফ হওয়ার কোনও দরকার নেই!” কঠোরতা এবং নমনীয়তা মিলিয়েই অবস্থা সামলাতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.