বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূল যে ভাবে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করত, এবার যেন সেই পথে হাঁটতে শুরু করল দার্জিলিং জেলা সিপিএমও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়িতে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এক নাগরিক কনভেনশন থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি জ্যোতি তিরকির যাবতীয় সভা-সমাবেশ, বৈঠক বয়কটের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সিপিএমের পক্ষ থেকে জ্যোতি তিরকিকে ‘সামাজিক ভাবে ঘৃণা’ করার ডাকও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জ্যোতি দেবীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “মানুষকে ঘৃণা করার ডাক যাঁরা দিতে পারেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলার নেই।”
একটা সময়ে বিধানসভা কিংবা সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের জন্য তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন অশোকবাবুরাই। এখন বিরোধী দল হিসেবে তাঁরাই সে পথে হাঁটছেন কেন? প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর যুক্তি, “আমরা তৃণমূলের কোনও মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বা সরকারি অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করিনি। জ্যোতি তিরকি সরকারি ভাবে তৃণমূলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করুন। তা হলে আমরা কিছু বলব না।” এর পরেই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী জানান, এক দলের সদস্যা হিসেবে থেকে অন্য দলের সমর্থনে পদে বসার মতো অনৈতিক কাজ যিনি করেছেন, তিনি সামাজিক ভাবে ঘৃণার যোগ্য। সে জন্যই তাঁর সভা, বৈঠক, সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অশোকবাবুর দাবি।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আওতায় থাকা অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও সিপিএমের দখলে। সভাধিপতির বৈঠকে না গেলে প্রধানরা এলাকার ব্যয়-বরাদ্দ পেশ করবেন কী ভাবে? বাড়তি বরাদ্দই বা আদায় হবে কী ভাবে? প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, “উন্নয়ন আটকাবে না। আমরা বিডিও, এসডিও, ডিএমের মাধ্যমে ব্যয়-বরাদ্দ আদায় করার চেষ্টা করব।”
প্রায় দু-দশক ধরে জ্যোতি দেবী সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েতের নানা স্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মাসখানেক আগে সাত আসন বিশিষ্ট শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ৩ জন কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করলে তা সমর্থন করেন জ্যোতি দেবী।
জ্যোতি দেবীকে ‘শো-কজ’ করে সিপিএম। এর পরে দু’সপ্তাহ আগে তৃণমূলের ৩ সদস্যের সমর্থনে সভাধিপতি নির্বাচিত হন জ্যোতি দেবী। ওই নির্বাচন অবৈধ অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সিপিএম।
একদা সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের জন্য যাঁরা সমালোচিত হয়েছেন, সেই তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ওঁরা (সিপিএম নেতারা) ভাবুন, কেন জ্যোতি তিরকির মতো অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সিপিএমের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।” |