ট্রেভর মর্গ্যানকে বোধহয় ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় মার্কোস ফালোপা-র! উল্টে ব্যর্থতার অন্ধকার সুড়ঙ্গে যত ঢুকছেন, ইস্টবেঙ্গলে ততই যেন জোরালো হচ্ছে তাঁর পূর্বসূরির নাম। কানের সামনে পূর্বসূরির নামে যত জয়ধ্বনি শুনছেন, ততই যেন ফালোপার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে!
ডেম্পোর পর ঘরের মাঠে আর এক গোয়ান জায়ান্ট সালগাওকরের কাছে শুক্রবার হারার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মর্গ্যান-প্রসঙ্গ উঠতেই ইস্টবেঙ্গল কোচ রীতিমতো খিঁচিয়ে উঠলেন প্রশ্নকারীকে, “আপনি বোধহয় মর্গ্যানের খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। এক সঙ্গে বসে মদ খেতেন!”
কথায় কথায় যিনি পেলে, নেইমার, ব্রাজিলের নাম করেন, ষাটোর্ধ্ব সেই ব্রাজিলীয় কোচের মুখে এ ধরনের কথা শোভা পায় কি? ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ানজয়ী কোচ সুভাষ ভৌমিক বললেন, “যে কোনও পেশার পারফর্মারদের ফোকাস নষ্ট করলে চলে না। আমিও বহুবার মিডিয়ার প্রশ্নে উত্তেজিত জবাব দিয়েছি। কিন্তু পরে বুঝেছি, সেটা উচিত ছিল না। ফালোপা সঠিক কী বলেছেন, জানি না। তবে যদি ওই মন্তব্য করেন, তা হলে সেটা অশোভনীয় হয়েছে।” ফালোপার মন্তব্যের নিন্দা করলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রথম জাতীয় লিগ জয়ী কোচ মনোরঞ্জন ভট্টচার্য-ও। “বড় ক্লাবে কোচিং করালে এ সব পরিস্থিতির সামনে পড়তেই হয়। আমরাও পড়েছি। কিন্তু আমরা ছোটবেলা থেকে ময়দান দেখে অভ্যস্ত। ফালোপা হয়তো এ সব জানেন না। কিন্তু মাথা গরম না করলেও চলত!” |
গত তিন বছরে মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গলকে যা দিয়েছেন, তার পরে লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে ফালোপার তুলনা হওয়া স্বাভাবিক। যুবভারতী হোক কিংবা কল্যাণী স্টেডিয়াম, টিম হারলে সমর্থকদের হতাশার বহির্প্রকাশের কোনও পার্থক্য নেই। শুক্রবার ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের গেটের বাইরেও একটা স্লোগান রেকর্ডারের মতো টানা বাজতে লাগল ‘গো ব্যাক ফালোপা, কাম ব্যাক মর্গ্যান’। প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি জুতো, চপ্পল-প্রদর্শনও বাদ নেই সেই ভিড়ে। উত্তেজিত ফালোপা কি সেটারই প্রতিক্রিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দিলেন? তবে মাঠেও মোগার সঙ্গে ফের বাতানুবাদে জড়িয়ে পড়েন লাল-হলুদ কোচ। সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরির হস্তক্ষেপে শেষমেষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কোচের আচরণ প্রসঙ্গে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “ফালোপা যদি এ রকম কথা বলে থাকেন, তা হলে সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলব। জানতে চাইব, কেন এ রকম মন্তব্য করেছেন?”
ফালোপা নিয়ে ক্লাব কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা সময় বলবে। তবে এই মুহূর্তে মাঠের বাইরের ঘটনা মাঠের ভিতরে মেহতাব-চিডিদের খেলায় যে প্রভাব ফেলছে, তাতে সন্দেহ নেই। পনেরো দিনের মধ্যে আই লিগে গোয়ার দু’টো টিমের কাছে হার। কোনও সঠিক পরিকল্পনা নেই। সেই এলোমেলো ফুটবল, বোঝাপড়ার অভাব। ডিফেন্স সংগঠনের ভুলে ম্যাচের শুরুতেই ০-২ পিছিয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। বাঁ দিক থেকে ডাফির ক্রস গোলকিপার অভিজিৎ ক্লিয়ার করলেও জটলার মধ্য থেকে কর্মার প্রথম গোল। দ্বিতীয়টা ফ্রান্সিসের। সালগাওকর কোচ ডেরেক পেরেরা বললেন, “প্রচুর খালি জায়গা পেয়েছি আক্রমণের জন্য।” বিরতির পরেও বিপক্ষ রক্ষণের গাফিলতিকে কাজে লাগিয়েই ৩-০ ক্লিফিমের। অভিজিৎ তৎপর না থাকলে ম্যাচের শেষে স্কোরলাইন ৪-২ হতে পারত! সালগাওকরের স্ট্রাইকার নাকপা একা গোলকিপারকে পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি। |
ইস্টবেঙ্গলের দু’টো গোল বিরতির পরে। হঠাৎ-ই দলের প্রধান স্ট্রাইকার ডাফির চোটে ৩-০ এগিয়ে থাকা সালগাওকর তখন চূড়ান্ত ডিফেন্সিভ। ফালোপা সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন। সালগাওকরের দীর্ঘকায় ফুটবলারদের আটকাতে খাবড়াকে মাঝমাঠ থেকে রক্ষণে নামিয়ে আনলেন। নওবার বদলে। উইং প্লে সচল করতে ডিকার বদলে আব্রাঞ্চেজ। দু’টো মোক্ষম পরিবর্তন ম্যাচের রং প্রায় পালটে দিয়েছিল। মুহূর্মুহু আক্রমণের ঝড় তুলে চোদ্দো মিনিটের মধ্যে ২-৩ করে ফেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। বলজিতের ক্রস থেকে মোগার ব্যাকহেড এবং লেনের মাটি ঘেসা বিদ্যুৎ গতির শটে।
যদিও কালীপুজোর আগের দিন গোটা শহর আলোয় ভাসলেও ফালোপার ইস্টবেঙ্গলের অন্ধকার দূর হল না। উলটে ক্লাব কর্তাদের ঘুরিয়ে ব্রাজিলীয় কোচের আক্রমণ, “এত দূরে খেলতে আসতে হলে তো এ রকমই হবে!”
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা (বলজিৎ), উগা, গুরবিন্দর, রবার্ট, খাবড়া, মেহতাব, লোবো, ডিকা (আব্রাঞ্চেজ), চিডি (লেন), মোগা।
|