|
|
|
|
এসএসকেএমে বন্ধ দুই পরিষেবা, ভোগান্তিই ‘ভবিতব্য’
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
দু’ক্ষেত্রেই শুরুটা হয়েছিল বেশ ঘটা করে। কাজ চলেওছিল অল্প কিছু দিন। কিন্তু তার পরেই ইতি। এসএসকেএম হাসপাতালের টেলি মেডিসিন বিভাগ এবং মেন ব্লকের এক্স-রে রুম কেন বন্ধ হল, কবে ফের শুরু হবে, আদৌ কখনও শুরু হবে কি না— সে প্রশ্নে হাসপাতালের তরফে প্রায় কারওরই মাথাব্যথা নেই। অসুবিধা সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত রোগীরাও এখন মেনে নিয়েছেন যে এটাই তাঁদের ভবিতব্য।
হাসপাতালের মেন ব্লকে রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে একটি এক্স-রে রুম চালু করা হয়েছিল। সাধারণ ভাবে এক্স-রে হয় রেডিওলজি বিভাগে। কিন্তু মেন ব্লকে একই সঙ্গে মেডিসিন, সার্জারি, নিউরো সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, ফিমেল মেডিসিন, ফিমেল সার্জারি, এন্ডোক্রিনোলজি-সহ মোট ১০টি বিভাগ। তাই ওই ব্লকের এক্স-রে রুমে ওই ওয়ার্ডগুলিতে ভর্তি রোগীদের এক্স-রে হয়। প্রতি দিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর এক্স-রে হত ওই ঘরে। গত ছ’মাস সেই ঘরেই তালা ঝুলছে।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, রেডিওলজি বিভাগ সম্পূর্ণ অন্য একটি ভবনে। যাঁরা গুরুতর অসুস্থ, তাঁদের পক্ষে মেন ব্লক থেকে এই টানাহেঁচড়া খুবই কষ্টের। তার উপরে বহু সময়েই রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ট্রলি বা স্ট্রেচার পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা ঠেলার জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মী মেলে না। ফলে ভোগান্তি বাড়তেই থাকে। ওই চিকিৎসক বলেন, “এর থেকে মুক্তির জন্য মেন ব্লকে এক্স-রে রুম খোলা হয়েছিল। কিন্তু অল্প কিছু দিন চলার পরেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে গেল। এতে শুধু শুধু সরকারের অর্থের অপচয় হল। রোগীদের কষ্টও কমল না।”
এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “এখন তো ডিজিটাল এক্স-রের যুগ। আমাদের হাসপাতালেও ডিজিটাল এক্স-রের জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আর ওই ঘরের এক্স-রের যন্ত্র খুবই পুরনো হয়ে গিয়েছিল। তাই ওটা নিয়ে আর মাথা ঘামানো হয়নি। ওই ঘরটাকে আর এক্স-রে রুম হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেই। পরিবর্তে রেডিওলজি বিভাগে ২৪ ঘণ্টার কর্মী রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে যাতে যে কোনও সময়েই প্রয়োজনে এক্স-রে করানো যেতে পারে।”
তা হলে ওই খালি ঘরটি অন্য কোনও ভাবে রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? সেই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর মেলেনি। রেডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সদাপ্রিয় বসু অবশ্য মানেননি যে, ওই ঘরে আর কখনও এক্স-রে হবে না। তাঁর বক্তব্য, “এক্স-রে যন্ত্রটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন যন্ত্র সারানো হয়েছে। কিন্তু ঘরের ছাদের চাঙড় খসে পড়েছে। তাই ঘর বন্ধ। ছাদ সারানো হলেই ফের পুরোদমে কাজ হবে।”
কোন বক্তব্যটা মানবেন, সে নিয়ে রোগীরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত। তবে কোনও কাজ চালু হয়ে বন্ধ হওয়ার এমন নজির এসএসকেএমে এটাই একমাত্র নয়।
বছর দশেক আগে এই এসএসকেএমেই চালু হয়েছিল টেলি মেডিসিন বিভাগ। জেলা স্তরের হাসপাতালগুলির সঙ্গে তো বটেই, এমনকী অন্য রাজ্যের বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির ডাক্তারদের সঙ্গেও এসএসকেএমের ডাক্তাররা পারস্পরিক মত বিনিময় করতে পারতেন। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই জানিয়েছেন, এর ফলে জেলার কোনও প্রত্যন্ত হাসপাতালে বসেও কলকাতার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডাক্তারদের মতামত জানার সুযোগ ছিল। ফলে কথায় কথায় কলকাতায় ছুটে আসার প্রবণতাও অনেকটাই বন্ধ করা যেতে পারত। এসএসকেএমের রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ের চারতলায় স্ত্রী-রোগ বিভাগের পাশে এই টেলি মেডিসিন বিভাগও চালু হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।
বিভাগটি ফের চালু করার উদ্যোগ তো দূরের কথা, কবে, কেন বিভাগটি বন্ধ হল— সে কথা মনেই করতে পারেননি বর্তমান বা প্রাক্তন কর্তারা। এমনকী স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারাও টেলি মেডিসিন বিভাগ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে। এসএসকেএমের এক চিকিৎসকের কথায়, “রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে এসএসকেএমে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের আশা ছিল, টেলি মেডিসিন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগও ফের চালু হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে কারওরই কোনও হেলদোল দেখছি না।” |
|
|
|
|
|