|
|
|
|
|
আমানত সীমা ২৫ হাজারে বাঁধল রাজ্য
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা
অনুপ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
রাজ্যের স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে স্থায়ী আমানতের (ফিক্সড ডিপোজিট) সর্বোচ্চ সীমা হল ২৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র গরিব মানুষই যাতে এতে টাকা রাখতে উৎসাহী হন, সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলে অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
দফতর সূত্রের খবর: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারের প্রকল্পে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। সরকারি মহলের দাবি, প্রথম দিনের বিজ্ঞাপন বেরনোর পরে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। ব্যাঙ্কগুলি বেঁকে বসলেও স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের মারফত প্রথম দিন থেকেই জমা পড়ে প্রভূত অর্থ। দেখা যায়, অধিকাংশ আমানতকারী চাইছেন মোটা টাকা ফিক্সড করতে এবং শহরবাসী উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তেরাই এর সুযোগ নিতে বেশি তৎপর। অথচ সরকার চাইছে, মূলত গরিব মানুষই এখানে টাকা রাখুন। তাই তুলনায় নিম্নবিত্তেরাই যাতে বেশি আকর্ষিত হন, সে জন্য স্থায়ী আমানতের ঊর্ধ্বসীমা ২৫ হাজার টাকায় বেঁধে দেওয়া হল।
পাশাপাশি অন্য কিছু কারণের কথাও জানিয়েছেন অর্থ-কর্তারা। দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা: রাজ্যের নিজস্ব স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পটি চালানোর ভার যাদের হাতে, সেই পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম (ডব্লিউবিআইডিএফসি)-এর মোট মূলধন এখন ৭৬০ কোটি টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন অনুযায়ী কোনও নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) তার মোট মূলধনের দেড় গুণ পর্যন্ত বাজার থেকে তুলতে পারে, আমানত হিসেবে। অর্থাৎ, নিগম তুলতে পারবে সর্বাধিক ১১৪০ কোটি। যে মুহূতের্র্ ওই পরিমাণ টাকা উঠে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে নিগমকে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ বন্ধ করে দিতে হবে। সরকারের যুক্তি: আমজনতার মধ্যে যে রকম সাড়া পড়েছে এবং যে ভাবে বিত্তবানেরাও এগিয়ে আসছেন, তাতে আমানতের ঊর্ধ্বসীমা ১ লক্ষ টাকা রাখলে মাস তিন-চারেকের মধ্যেই ১১৪০ কোটি উঠে যাবে। প্রকল্প বেশি দিন চালু রাখা তো যাবেই না, উপরন্তু বহু নিম্নবিত্ত প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই ঊর্ধ্বসীমা ২৫ হাজারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত।
সরকারি কর্তাদের দাবি, মূলত দরিদ্র মানুষের করা ছোট ছোট অঙ্কের আমানতের মাধ্যমে ১১৪০ কোটির গণ্ডিতে পৌঁছতে নিগমের বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তাতে প্রকল্প দেড়-দু’বছর চালু থাকার সম্ভাবনা। এতে বাড়তি একটা সুবিধে হবে। সর্বোচ্চ সীমা ২৫ হাজার টাকা হলে আমানতের মেয়াদ শেষে উৎসমূলে কর কাটার (টিডিএস) দায় নিগমের থাকবে না। যেখানে প্রতিশ্রুত ৯% হারে এক লাখ টাকার আমানতে এক বছরের মেয়াদশেষে অর্জিত সুদের অঙ্ক দাঁড়াবে অন্তত ৯ হাজার, যা টিডিএস-যোগ্য (আয়কর-আইন অনুযায়ী বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সুদ ৫ হাজার টাকা ছাড়ালেই উৎসমূলে কর কাটতে হবে)। কিন্তু সেই দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালনের মতো পরিকাঠামো নিগমের নেই।
এ হেন বিবিধ সমস্যা খতিয়ে দেখেই ফিক্সড ডিপোজিটে সীমা ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অর্থ দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশা, এর দরুণ শহর-গ্রামের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ রাজ্যের স্বল্প সঞ্চয়ে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন॥
ভবিষ্যৎ যা-ই হোক না কেন, রাজ্যের নিজস্ব সঞ্চয় প্রকল্প যাত্রা শুরু করছে আগামী সপ্তাহে। আপাতত স্থির রয়েছে, ৬ নভেম্বর বিকেল চারটেয় মুখ্যমন্ত্রী টাউন হলে তিনশো আমানতকারীর হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে উদ্যোগটি উদ্বোধন করবেন। সংশ্লিষ্ট আমানতকারীদের ওই দিন কলকাতায় হাজির করানোর ব্যবস্থা করতে অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কলকাতার পুর-কমিশনার ও লাগোয়া চার জেলার ডিএম’কে চিঠি দিয়েছেন। কলকাতা থেকে ওই অনুষ্ঠানে ৬০ জনকে হাজির করাতে হবে। চারটি জেলাকেও ‘কোটা’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, “কন্যাশ্রী প্রকল্পে বিভিন্ন জেলা যে ভাবে ছাত্রী বাছাই করে কলকাতায় পাঠিয়েছিল, প্রতি জেলার স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকেরা তেমনই এজেন্টদের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী বাছবেন।” |
|
|
|
|
|