|
|
|
|
তিন ব্যাঙ্ক বেসুর, নয়া কাঁটা রাজ্য সঞ্চয় প্রকল্পে
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে ৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার কথা রাজ্য সরকারের নিজস্ব সঞ্চয় প্রকল্প ‘সেফ সেভিংস স্কিম’। আর তার ছ’দিন আগে প্রকল্প ঘিরে তৈরি হল নতুন বিতর্ক।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশন (ডব্লিউবিআইডিএফসি) সম্প্রতি বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, চারটি ব্যাঙ্কের যে কোনও শাখায় এর প্রকল্পের জন্য টাকা জমা দেওয়া যাবে। ব্যাঙ্কগুলি হল: ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, ইউকো ব্যাঙ্ক এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কিন্তু ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের জন্য টাকা জমা নেবেন না। তাঁদের না জানিয়েই বিজ্ঞাপনে ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের নাম উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার। এবং শুধু ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক নয়, স্টেট ব্যাঙ্ক এবং ইউকো ব্যাঙ্কও জানিয়েছে, এই প্রকল্পের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নিগমের সঙ্গে কথা চলছে বটে, কিন্তু কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে সাত তাড়াতাড়ি বিজ্ঞাপনে নাম দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ এই দুই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও।
ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে পাকা কথা হওয়ার আগেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হল কেন?
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বক্তব্য, “স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির শেষ বৈঠকে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সব ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষই উপস্থিত ছিলেন। তবে কোনও কোনও ব্যাঙ্কের হয়তো নিজস্ব সমস্যা থাকতে পারে। এ ব্যাপারে ফিনান্স কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাঁদেরই প্রকল্প চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন। এটা অর্থ দফতরের বিষয় নয়।”
“দিন দুয়েক আগে রাজ্য অর্থ সচিবের ঘরে প্রকল্প নিয়ে চার ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে,” বললেও আলোচনা যে চূড়ান্ত হয়নি, সে কথা অবশ্য কবুল করছেন নিগম কর্তারা। জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কোনও চুক্তিও হয়নি। তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, “আলোচনা চলাকালীন বিজ্ঞাপনে ব্যাঙ্কের নাম দিলে কোনও সমস্যা হবে না বলেই ধারণা ছিল।”
তিনটি ব্যাঙ্ক বেঁকে বসার পরে নিগম এ বার কী করবে? কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তাই আপাতত তাদের মাধ্যমেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি, সম্ভব হলে আজ, শুক্রবারই জারি করা হবে সংশোধিত বিজ্ঞাপন।
কিন্তু সমস্যা সেখানেও। কারণ, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের সিএমডি অর্চনা ভার্গব বলেছেন, “আমাদের সঙ্গে ডব্লিউবিআইডিএফসি-র কথা হয়েছে। তবে ওই প্রকল্পে আমরা সরাসরি টাকা জমা নেব না। কেউ যদি আমাদের ব্যাঙ্কে সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তার পর ওই প্রকল্পে টাকা স্থানান্তরিত করতে বলেন, তা হলে ওই টাকা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেব।” অর্থাৎ রাজ্যের বক্তব্য মেনে সরাসরি এই প্রকল্পের টাকা নেবে না ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক।
তা-ই যদি হয়, তা হলে তো যে কোনও ব্যাঙ্কের সেভিংস ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই প্রকল্পে টাকা রাখা যেতে পারে। এ জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই। আলোচনা দরকার হয়, একমাত্র সরাসরি টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ, এই ধরনের পরিষেবা দিলে ব্যাঙ্কগুলি একটা ফি বা কমিশন নেয়। সেই ফি-এর পরিমাণ নির্ধারণ হয় আলোচনার মাধ্যমে। ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস চন্দ্রশেখরণ এ দিন বলেন, “ডব্লিউবিআইডিএফসি-র সঙ্গে যে আলোচনা চলছে তার অন্যতম বিষয় হল, ওই প্রকল্পের টাকা জমা নেওয়ার পরিষেবা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক কী আর্থিক সুবিধা পাবে।”
সারদা-কাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করা সঞ্চয় প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে একেবারে গোড়া থেকেই। এমন প্রকল্পের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ বার প্রকল্পে টাকা জমা দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হল ধোঁয়াশা। রাজ্যের অবশ্য দাবি, স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের মাধ্যমে প্রথম দিনেই বিপুল পরিমাণ টাকা জমা পড়েছে প্রকল্পে। কিন্তু সেই টাকাও নেওয়া হয়েছে চেক মারফৎ। যদিও এই ধরনের স্বল্প সঞ্চয়ের মূল লক্ষ্যই হল সেই সব পরিবারের কাছে পৌঁছনো, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। যাঁরা সরাসরি টাকা জমা করতে পারবেন। ফলে ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকা নিয়ে ধোঁয়াশা অবিলম্বে কাটানোর ব্যবস্থা না-করা হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের।
|
পুরনো খবর: সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পের প্রস্তাব ঘিরে প্রশ্ন বিস্তর |
|
|
|
|
|