|
|
|
|
কৃষিপণ্য পাঠানো যাবে না ভিন্ রাজ্যে, নির্দেশ মমতার
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রাজ্যের উৎপাদিত কৃষিপণ্য আর অন্য রাজ্যে পাঠানো যাবে না। আলু-সহ বিভিন্ন আনাজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ রাজ্যের কৃষিজাত পণ্য ভিন রাজ্যে পাঠানো রুখতে পুলিশ এবং এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু কোন আইনে এ রাজ্যের কৃষিপণ্য অন্য রাজ্যে পাঠানো আটকানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, নিয়ম মতো কর দিয়ে দেশের যে কোনও রাজ্য থেকে সব ধরনের পণ্য অন্য রাজ্যে পাঠানো যায়। সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের আলু ব্যবসায়ী সম্পাদক বরেন মণ্ডল জানিয়ে দিয়েছেন, হিমঘর থেকে আলু বেরই করবেন না তাঁরা। ব্যবসায়ীদের পাল্টা প্রশ্ন: ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা যদি এ রাজ্যে পেঁয়াজ, আদা, রসুন-সহ অন্য জিনিসপত্র পাঠানো বন্ধ করে দেন, তা হলে কী হবে? সে ক্ষেত্রে শুধু কৃষিপণ্য নয়। মাছ, ডিম, চিনি, সরষের তেল-সহ বহু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসই আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।
এ ব্যাপারে রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বাংলার মানুষের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন।” মন্ত্রীর বক্তব্য, “নির্দেশ জারি হয়েছে, এ রাজ্যের কৃষিপণ্য ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে হলে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এ রাজ্যের মানুষের চাহিদা মেটানোর পরে অন্য রাজ্যে জিনিস পাঠাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা এ রাজ্যে জিনিস পাঠানো বন্ধ করলে কী হবে সে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আগে ওঁরা পাঠানো বন্ধ করুন, তার পরে ভেবে দেখা যাবে।” |
 |
টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নবান্নে। ছবি: প্রদীপ আদক। |
জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী যে টাস্ক ফোর্স গড়েছেন, বৃহস্পতিবার সেই টাস্ক ফোর্সের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল নবান্নে। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, “পুজোর সময় থেকে আলু-সহ বিভিন্ন আনাজপত্রের দাম বেড়েই চলছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভেবেছেন, হাঁস কেটে একেবারে সব সোনার ডিম বার করে নেবেন। তা হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, পাইকারি বাজারে ১১ টাকা কেজি দরে জ্যোতি আলু বিক্রি করতে হবে। খুচরো বাজারে ওই আলু কেজি প্রতি ১৩ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, কোনও ব্যবসায়ী বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিলে পুলিশ সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। তবে এর আগেও কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় জ্যোতি আলুর দাম কেজি প্রতি ১৪ টাকায় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে ওই দামে আলু পাননি বলে অভিযোগ। অন্য দিকে খুচরো বাজারে আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা পাইকারি বাজারে সরকারি দাম পাননি। ফলে খুচরো বাজারে সরকারি দাম দেওয়াও সম্ভব নয়। উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি-মালবাজারের একাধিক জায়গায় এ দিন আলু বিক্রিই বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, পুলিশ যত্রতত্র আলুর ট্রাক আটকে দিচ্ছে। ভিন্ রাজ্যে যাওয়া আটকাতে রাজ্যের সীমানায় আলুবাহী ট্রাক আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এমনিতেই নিয়েছে সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আলু নিয়ে গেলেও আটক করা হচ্ছে ট্রাক। বুধবার বাঁকুড়ায় পুলিশ একটি ট্রাকের খালাসি এবং চালককে গ্রেফতার করেছে। ওই দিনই পুরুলিয়ায় ৮টি আলুবোঝাই ট্রাক আটকে দেয় পুলিশ। ট্রাকগুলি বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া আসছিল। রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা স্বপন সামন্ত বলেন, “জেলায় আলু সরবরাহে সমস্যা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আলুর দাম বাড়বে।” ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্রাক চালকেরা পুলিশের আতঙ্কে আলু পরিবহণে রাজি হচ্ছেন না।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের আলু চাষিদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হুগলির ধনেখালির ধামাইটিকর গ্রামের চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন, “রাজ্য সরকার যা করছে, তাতে আলু কিনতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। এই সময় চাষিরা আলু বেচে পরের মরসুমের রসদ জোগাড় করে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি আলু বেচব কার কাছে?”
মমতা অবশ্য আমদানি কমিয়ে রাজ্যের উৎপাদন বাড়ানোর উপরেই জোর দিচ্ছেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কৃষি ও মৎস্য চাষে ভিন্ রাজ্যের উপর নির্ভরতা চলবে না। এ বার থেকে আলুর বীজও এই রাজ্যে তৈরি হবে।” পেঁয়াজে এ রাজ্যের চাহিদা বছরে পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন। এখন তিন লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চাষ হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেবল বাঁকুড়া জেলাতেই এই বছর ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা হবে। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার এখন শহরে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বাঁকুড়ার পেঁয়াজ বাজারে এলে গ্রামের মানুষের কাছেও সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবে।” কৃষি দফতরের অধীনে থাকা ৩৫০টি জলাশয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষও শুরু হয়েছে। আগামী বছরে সেই মাছ বড় হয়ে বাজারে আসবে।
|
পুরনো খবর: ভিন্ রাজ্যে আলুর ট্রাক পাঠাতে বাধা, ক্ষোভে বিক্রি বন্ধের হুমকি |
|
|
 |
|
|