চলছে ভোজ, বিডিও এসে রুখলেন নাবালিকার বিয়ে
রাত প্রায় সাড়ে ১০টা। বাঁকুড়ার রাইপুর থানার আনাড়া গ্রাম। গ্রামের একপ্রান্তে একটি বাড়িতে বিয়ের আয়োজন সারা। বাড়ির পাশেই প্যান্ডেলে আত্মীয়স্বজন থেকে পড়শিদের খাওয়াদাওয়া চলছে। মাইকে সানাইয়ের সুর। আর একটু পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে বর কনে। হঠাৎ পুলিশ নিয়ে বাড়িতে হাজির রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস।
বিডিও খবর পেয়েছেন ওই বাড়িতে নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে। বিয়ে বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও পাত্র ও পাত্রীপক্ষ মানতে নারাজ। ঘণ্টাখানেক বোঝানোর পরে শেষে বর-সহ বিয়ের আয়োজকদের সকলকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিতেই বন্ধ হয়ে গেল বছর বারোর ওই কিশোরীর বিয়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই কিশোরীর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার হরিরাজপুর গ্রামে। বাবা পেশায় দিনমজুর। মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাইপুর থানার দুবনালা গ্রামের বাসিন্দা, স্বপন দুলের বছর বাইশের ছেলে ফুলচাঁদের সঙ্গে। স্থানীয় আনাড়া গ্রামে মেয়েটির মাসির বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বিডিও বলেন, “বুধবার রাত ৯টা নাগাদ স্থানীয় ভাবে আনাড়া গ্রামে এক নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড় চলছে বলে খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মন্ডলকে বিষয়টি জানাই। এর পর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে ওই গ্রামে যাই। বাল্যবিবাহ যে আইনত দণ্ডনীয়, তা প্রথমে বোঝানো হয় বর ও কনে পক্ষকে। ওঁরা বিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে কিন্তু কিন্তু করতে থাকেন। পুলিশে দেওয়ার কথা বলতেই ওঁরা বিয়ে বন্ধে রাজি হন।” বিডিও জানান, বৃহস্পতিবার ওই মেয়েটির পরিবারের লোকজনকে ব্লক অফিসে ডাকা হয়। ব্লক অফিসের কর্মীরাই প্রায় ২৫ হাজার টাকা চাঁদা তুলে মেয়েটির নামে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করে দিচ্ছেন। ওই জমা টাকা থেকেই মেয়েটি সাবালিকা হওয়ার পরে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মেয়েটি পড়তে চাইলে তাকে স্থানীয় হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিডিও জানিয়েছেন।
এত কম বয়সে বিয়ে দেওয়া যে অপরাধ, সে কথা জানেন ওই কিশোরীর বাবা। তবে তাঁর দাবি, “আমার তিনটি মেয়ে। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। দু’টি মেয়ের কোনও রকমে বিয়ে দিয়েছি। ভাল পাত্র পেয়েছিলাম বলে ছোট জনের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। বিডিও-র কথামতো এখন আর মেয়ের বিয়ে দেব না।” পাত্রের বাবা স্বপন দুলের আবার দাবি, “মেয়ের বাড়ির লোকেদের জোরাজুরিতেই ছেলের বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। মেয়ের বয়স যে এতটা কম, জানতাম না!”
আর প্রাথমিক থেকেই স্কুলছুট ওই কিশোরী প্রশাসনকে জানিয়েছে, পড়াশোনায় তার আর বিশেষ আগ্রহ নেই। “তবে বিডিও সাহেব আমার ভালর জন্য যা করবেন, যা বলবেন, তা-ই শুনব”বলছে মেয়েটি। বিডিও দীপঙ্করবাবুর কথায়, “মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাল্যবিবাহ রোধে এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারের খামতি রয়েছে। এর জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.