লেখাপড়ার ফাঁকেই মোমবাতি, প্রদীপ গড়ে ‘অন্য লড়াই’ ওদের
দের কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী, কেউ বা মূক-বধির। কারও কথা বলায় জড়তা বা হাঁটাচলায় সমস্যা।
সেই প্রসূন, শুভেন্দু, সুমিতারাই এখন খুব ব্যস্ত! ব্যস্ত মোমবাতি, প্রদীপ গড়ার কাজে। বছরের এই সময়টা তাদের কাছে ‘স্পেশ্যাল’। কারণ তারা জানে, তাদের হাতে গড়া প্রদীপ, মোমবাতিই কালীপুজোর রাতে আলো ছড়াবে না জানি কত গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে কিংবা মন্দিরে ও পুজো মণ্ডপে।
বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে বড়জোড়ার প্রতিবন্ধীদের স্কুল ‘আশার আলো’-র উঠোনে বসে এখন এক মনে কাজ করে চলেছে কয়বয়সী এই সব কারিগর। দীপাবলির সময় প্রদীপ আর মোমবাতি। নতুন বছরের প্রাক্কালে গ্রিটিংস কার্ড। আবার রাখি পূর্ণিমার আগে রাখি বানায় তারা। এ ছাড়াও, সারা বছর চক বানানো ও বুটিকের কাজ রয়েইছে। নিজেরাই সেগুলি হাতে করে বয়ে নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রি করে উপার্জনের টাকা হাতে নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রতিবন্ধকতা নিয়েই এ ভাবে তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, বারান্দার মেজেতে বসে শতাধিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী মোমবাতি ও প্রদীপ বানাচ্ছে। গৌতম মণ্ডল, প্রসূন পাল, শুভেন্দু ভুঁই, সুমিতা সুর, সোমা মণ্ডলএদের সবারই বয়স ১৬-১৮’র মধ্যে। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই নিজেদের মধ্যে মজা করছিল তারা। কে কত কম সময়ে বেশি মোমবাতি বানাতে পারে, নিজেরাই নিজেদের মধ্যে খেলাচ্ছলে সেই প্রতিযোগিতা চালাচ্ছিল। নিম্নচাপের মেঘ সবে সরেছে। তাই মোমবাতি ও প্রদীপগুলি রোদে ফেলে শুকিয়ে নেওয়ার কাজেও ব্যস্ত অনেকে। এরই মধ্যে স্কুলে মিড-ডে মিলের ঘণ্টা পড়ল।
মোমবাতি তৈরিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। ছবি’ অভিজিৎ সিংহ।
মেঝে থেকে মোমবাতি, প্রদীপ সরিয়ে আসন পেতে খেতে বসার তোড়জোড় শুরু করল ওরা।
বড় বড় কিছু পুজো কমিটির কাছ থেকে প্রদীপ তৈরির বরাত ইতিমধ্যেই মিলেছে। তবে, এখানেই থেমে থাকতে চায় না তারা। সবার মধ্যেই তাই দীপাবলির শেষ মুহূর্তের বাজার ধরার ব্যস্ততা তুঙ্গে। ওই স্কুলের সম্পাদিকা সোমা মুখোপাধ্যায় জানালেন, বড়জোড়া ছাড়াও বেলিয়াতোড়, গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া সদর এমনকী জেলা ছাড়িয়ে দুর্গাপুরেও যায় ‘আশার আলো’র তৈরি প্রদীপ ও মোমবাতি। স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা সেগুলি বানায়। বাজারে বিক্রির দায়িত্ব থাকে স্কুলেরই কিছু প্রাক্তন ছাত্রের উপরে, যাঁরা এখন স্কুলের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এমনই এক জন বড়জোড়ার মালিয়াড়ার বাসিন্দা, মানসিক প্রতিবন্ধী অরূপ মিশ্র। ২০০২ সালে ছাত্র হিসেবে স্কুলে এসেছিলেন তিনি। এখন স্কুলের কর্মী। ব্যাগে করে মোমবাতি, প্রদীপ নিয়ে গিয়ে দোকানে দিয়ে আসেন তিনি। অরূপের কথায়, “এখন চিনে বাতি খুব চলছে। তাই মোমবাতি, মাটির প্রদীপের বিক্রি কিছুটা কম হচ্ছে। কিন্তু, এর কোনও বিকল্প হতে পারে না। আমি দোকানদারদের এটাই বোঝাই।” আর এক মূক-বধির প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে স্কুলের কর্মী মনোরঞ্জন রায়ও মোমবাতি ও প্রদীপ ব্যাগে করে পুজো কর্মকর্তা ও দোকানদারদের দিয়ে আসেন। বড়জোড়ার এক পুজো কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মণ্ডল বলেন, “প্রতি বছরই আমরা ‘আশার আলো’র পড়ুয়াদের তৈরি মোমাবিত-প্রদীপ নিই। প্রথমত, ওদের তৈরি জিনিসের গুণগত মান খুব ভাল। তা ছাড়া, ওদের সঙ্গে একটা মানসিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে।”
স্কুলের সম্পাদিকা বললেন, “এই সব প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়কে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া ও স্বনির্ভর করাই আমাদের লক্ষ্য। তাই পড়াশেনার ফাঁকে বিভিন্ন হাতের কাজও ওদের শেখানো হয়। দরকার পড়লে যাতে ভবিষ্যতে এই কাজের মাধ্যমে ওরা জীবনধারণ করতে পারে।” বিডিও (বড়জোড়া) ইস্তেয়াক আহমেদ খান বলেন, “ওই স্কুলের কাজকর্ম সম্পর্কে শুনেছি। ওদের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি কোনও সরকারি মেলায় স্টল দিতে চান, তা হলে প্রশাসন সেই ব্যবস্থা অবশ্যই করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.