ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলে কার না ভাল লাগে! কিন্তু ছেলে যে জেল থেকে পালিয়ে সোজা বাড়িতে এসেছে, প্রথমে তা বুঝতে পারেননি মা। তাই ছেলে ফিরতেই উনুনে হাঁড়ি চড়িয়েছিলেন তিনি। সপ্তাহ কয়েক পরে মায়ের হাতের আলুভাজা আর সেদ্ধ ভাত তৃপ্তি করে খেয়ে ছেলেও উঠে গিয়েছিলেন নিজের ঘরে। চোখটা একটু লেগেও এসেছিল বছর বাইশের ওই যুবকের। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশ। জেল থেকে পালানোর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই বাড়ি ঘুরে নদিয়ার বেতাই গ্রামের গৌতম রায় ফের ফিরে গিয়েছেন শ্রীঘরেই।
তেহট্টের উপ-সংশোধনাগার থেকে বৃহস্পতিবার সকালে গৌতম ছাড়াও আরও এক জন পালিয়েছিলেন। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ধৃত বাংলাদেশের ওসমান হোসেন নামে সেই বন্দির রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। দু’জনেরই বিচার চলছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বধূ নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় গৌতমকে। পেশায় দিনমজুর গৌতমের বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রাম লালবাজারে। মাস দেড়েক পরেই তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন স্ত্রী। গৌতম গ্রেফতার হন। তেহট্ট উপ-সংশোধনাগারে আর পাঁচ জন আবাসিকের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। আপাত নিরীহ স্বভাবের গৌতম যে এমন কাণ্ড করতে পারে, তা ভাবতে পারেননি তাঁর বাড়ির লোকজনও। তাঁর মা টুনু রায় বলেন, “প্রথমে বুঝতে পারিনি যে ও জেল থেকে পালিয়েছে। ভেবেছিলাম জামিন পেয়েছে। ওর বাবা রাস্তায় লোকজনের মুখে খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে আসে। জানতে পারি যে ছেলে কী করেছে। আমরা খুব ভয়ও পেয়ে গিয়েছিলাম।” গৌতমের বাবা গণপতিবাবু পেশায় রিকশা চালক। তিনি বলেন, “যখনই জানতে পারি যে, ছেলে জেল থেকে পালিয়ে এসেছে, তখনই ওকে বোঝায় যে আত্মসমর্পণ করাই ঠিক। তার মধ্যেই পুলিশ আসে।”
কী করে পালিয়ে গেলেন গৌতম ও ওসমান? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সংশোধনাগারের প্রাচীরের পাশেই সেপটিক ট্যাঙ্ক। তার পাশেই অফিস। সেপটিক ট্যাঙ্কে উঠে ওই অফিসের জানলা ধরে ছাদে উঠে যান দু’জন। সেখান থেকে প্রাচীরে উঠে জলের পাইপ বেয়ে তাঁরা বাইরে চলে যান। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দু’জন কী ভাবে পালিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতকে জেরা করে তা জানার চেষ্টা হচ্ছে।”
এমন ঘটনা তেহট্ট উপ-সংশোধনাগারে অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১২ সালের ২ মে তেহট্টের ওই উপ-সংশোধনাগার থেকে চম্পট দিয়েছিলেন হাফিজুল শেখ নামে বিচারাধীন এক বন্দি। তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |