এক জনের কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই। প্রতিপক্ষের কাছে এক রকম অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ।
এ বার বহরমপুর পুরযুদ্ধকে আমজনতা এ ভাবেই দেখছে। আমজনতা কেন, খোদ যুযুধান দু’পক্ষ— কংগ্রেস ও তৃণমূলের রথী মহরথীদের কাছেও বহরমপুর ভোটযুদ্ধ ইজ্জতের সওয়াল।
১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বহরমপুর পুরসভা বিরোধী শূন্য ভাবে দখলে রেখেছে কংগ্রেস। তিন বারের পুরভোটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহরমপুরের নির্বাচনী সভায় জনতার ঢল নেমেছিল যথেষ্ট। কিন্তু ব্যালট বক্সে তার ছায়া পড়েনি। তিন বারই তৃণমূলের অনেক প্রার্থীর জামানতও জব্দ হয়েছিল। ওই কৃতিত্বের এক এবং অদ্বিতীয় কাণ্ডারি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি, মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা।
কিন্তু এ বারের পুরভোটে আশায় বুক বাঁধছে তৃণমূল। বর্তমান রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর ‘খাস তালুক’ বলে প্রচারিত মুর্শিদাবাদ জেলায় ইতিমধ্যে সাগরদিঘি বিধানসভা, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের একটি আসন দখল করেছে তৃণমূল। ওই অক্সিজেনে বলীয়ান তৃণমূল প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি ঘুরতে শুরু করে দিয়েছেন। |
বহরমপুর পুরভোটে তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর বলেন, “১৩ নভেম্বর বহরমপুর এফইউসি মাঠে আমাদের দলের জনসভা। জনসভায় থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ছাড়াও রাজ্যের ৩ মন্ত্রী এবং ৩ সাংসদ।” অধীরবাবু অবশ্য ভোট প্রচারের সলতে পাকানোর কাজটি সেরে ফেলেছেন পর পর দু’ দিন— গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার। বুধবার বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “দেড় খানা লুচি, আড়াইখানা আলু আর পাঁচ গ্রাম বোঁদে খেয়ে ভোটে নেমে যান। ভোটটা কিন্তু ভাল করে লড়তে হবে।”
বুধবারের বিজয়া সম্মিলনীর রসিক রেল প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবারের জেলা কংগ্রেস কমিটির রুদ্ধদ্বার সভায় ছিলেন রীতিমতো ‘সিরিয়াস’ ও আবেগমথিত। সেখানে তিনি বলেন, “আমাদের বিপক্ষে যাঁরা ভোটে লড়ছেন, তাঁদের অনেককেই কয়েক বছর আগে দেখেছেন পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে লাঠিভূত সেজে শান্ত শহরকে অশান্ত করতে। তাঁদের হাত থেকে বহরমপুরের মানুষের শান্তি ও উন্নয়ন রক্ষা করতে প্রয়োজনে ২২ নভেম্বর ভোটের দিন আমি জীবন পর্যন্ত দিতে রাজি।” হাততালিতে তখন জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ফেটে পড়ার জোগাড়। সভায় বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “২২ নভেম্বর ভোটের দিন গোটা জেলার কংগ্রেস কর্মীরা বহরমপুরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন, তাঁরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকবেন।”
কিন্তু ২২ নভেম্বরের আগেই তো রয়েছে ১৬ নভেম্বর। তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনের মামলায় ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অধীরবাবুর অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ রয়েছে। ১৬ নভেম্বর আগাম জামিনের শুনানি। সেই শুনানি শেষে তাঁর আগাম জামিন মিলবে কি না, সেই অনিশ্চয়তা কংগ্রেস কর্মীদের কিন্তু ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত করে রাখছে। রেল প্রতিমন্ত্রীও চান ১৬ তারিখের আগেই নির্বাচনী প্রচার সেরে ফেলতে। সেই প্রচারে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই তিনি কোমর বেঁধে নামতে চলেছেন।
|