অস্ট্রেলিয়া-নিধন যজ্ঞ শেষ হয়েছে তখন ঘণ্টা খানেক হবে। তারই মধ্যে নাগপুর থেকে একটা ফোন গেল দিল্লিতে। ফোনটা ধরে রাজকুমার শর্মা শুনলেন অতি পরিচিত একটা গলার স্বর: “স্যার, ইনিংসটা ঠিকঠাক ছিল তো?”
দু’বার সাড়ে তিনশোর উপর রান করে দলকে জেতানো। দু’বারই সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়া শিবিরের আতঙ্ক। আর বিরাট কোহলির মনোভাব কী রকম? তিনি যেন গোটা ব্যাপারটায় বেশ মজাই পাচ্ছেন। “আসলে ও পুরো ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছে। বুধবার ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে আমাকে ফোন করেছিল। করেই বলল, ইনিংসটা ঠিক ছিল তো? বুঝুন! জয়পুরের ম্যাচটার পরও আমাকে ফোন করে একই কথা জিজ্ঞেস করেছিল,” এ দিন বলছিলেন বিরাটের ছোটবেলার কোচ রাজ কুমার।
ছাত্রের সঙ্গে আলাপচারিতার পর কোচের মনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা করাটা কোহলি এখন খুব উপভোগ করছেন। “বিরাট একেবারে টগবগ করে ফুটছে। ওর কথা শুনে মনে হল, একটু যেন দুষ্টুমিও করছে। পুরো ব্যাপারটা উপভোগ করছে ও। তবে দিনের শেষে আসল কথাটা হল, ভারতের হয়ে খেলতে আর ম্যাচ জেতাতেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে বিরাট।”
বিরাটের ১৭টা ওয়ান ডে সেঞ্চুরির মধ্যে ১১টা এসেছে রান তাড়া করে। এবং সবচেয়ে তাৎপর্যের হল, যে যে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট, সে সব ম্যাচ রান তাড়া করে জিতেছে ভারত। অবিশ্বাস্য এই কৃতিত্বের রেসিপিটা কী? কোচ বলছেন, “রান তাড়া করতে নামলেই ওর ভিতরের আগুনটা বেরিয়ে আসে। ও মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে যায় যে মাঠে নেমে কিছু একটা করতে হবে। এই ব্যাপারটা ওকে তাতিয়ে দেয়। মনে রাখবেন, রান তাড়া করে সফল হওয়ার পিছনে কোনও ইনস্ট্যান্ট ফর্মুলা নেই। বিরাট শুধু সামনে অসম্ভব কোনও টার্গেট দেখলে একটা বাড়তি তাগিদ অনুভব করে।”
ভারতের প্রাক্তন ওপেনার চেতন চৌহান বলছিলেন, “দিল্লি থেকে অতীতেও অনেক ভাল ব্যাটসম্যান বেরিয়েছে। একটা সময় ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের চাবিকাঠিটা ছিল গম্ভীর আর বিরাটের হাতে। এখন ব্যাটসনটা চলে গিয়েছে বিরাটের কাছে।”
অনেকেই ইতিমধ্যে সচিনের জায়গায় বিরাট কোহলিকে দেখতে শুরু করেছেন। সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তিও সে কথা বলছেন। এটা কি চাপে ফেলে দেবে বিরাটকে? কোচ রাজ কুমার বলছেন, “আমি যতদূর বিরাটকে চিনি, তাতে বলব, এই সব তুলনা নিয়ে ও মাথা ঘামায় না। ও শুধু ক্রিকেটটা খেলতে চায়।” দিল্লির রঞ্জি দলে বিরাটদের কোচ বিজয় দাহিয়ার বক্তব্য, “এ রকম তুলনা ওঠাটা এখন স্বাভাবিক। আমি এটুকু বলব, যে বিরাটকে আমি রঞ্জি ট্রফিতে দেখেছিলাম, তার সঙ্গে এই বিরাটের কোনও মিল নেই। ওই ছেলেটা বিশ্বাস করে কোনও কিছুই অসম্ভব নয় ওর জন্য।” |
