ভারতীয় স্কোয়াশ-কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে ইতিহাস গড়লেন কলকাতার ছেলে সৌরভ ঘোষাল!
প্রথম ভারতীয় হিসাবে স্কোয়াশে বিশ্বের সবথেকে অভিজাত টুর্নামেন্ট, এ জে বেল পিএসএ বিশ্ব স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ আটে গেলেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়, এ দিন প্রি-কোয়ার্টারে ফিনল্যান্ডের হেনরিক মুসটোনেনের কাছে প্রথম দুই গেম হারার পরে যে ভাবে নিজেকে নতুন করে সংগঠিত করে দুর্দান্ত লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ বের করলেন, তার জন্য সৌরভের কীর্তি আরও প্রশংসনীয় হয়ে থাকল। জেতার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সৌরভ বেশ আবেগতাড়িত ভাবেই বলেছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে এটা আমার কাছে একটা বিরাট সাফল্য। বিশেষ করে আজকের ম্যাচটার আলাদা তাৎপর্য ছিল। তাই এই জয়টার সঙ্গে একদম অন্য রকমের একটা আবেগ জড়িয়ে গিয়েছে। ভাবতেই পারছি না যে, আমি বিশ্বের সেরা আট প্লেয়ারের এক জন হিসাবে এই টুর্নামেন্টের শেষ আটে গিয়েছি!”
শেষ চারে উঠতে পারলে নিজের দেশের হয়ে আবার একটা নতুন শৃঙ্গ জয়ের হাতছানি সাতাশ বছরের সৌরভের সামনে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়াইটা তাঁর অসম্ভব কঠিন হতে চলেছে। কারণ বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সতেরো নম্বর সৌরভের সামনে পড়েছেন বিশ্বের এক নম্বর, মিশরের রামি আশৌর। তবে প্রতিপক্ষের ভারে একেবারেই ঘাবড়াচ্ছেন না অর্জুন বিজয়ী বাঙালি। বরং বলেছেন, “আশা করছি কাল ফিরে এসে আবার একটা ভাল লড়াই দিতে পারব এবং নিজের জন্য পরের রাউন্ডে ওঠার একটা সুযোগ তৈরি করতে পারব।” |
নাম: সৌরভ ঘোষাল |
জন্ম: ১০ অগস্ট, ১৯৮৬, কলকাতা
বর্তমান ঠিকানা: লিডস পেশাদার হন ২০০৩
বিশ্ব র্যাঙ্কিং: ১৭,
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন: ২০০৬-০৯
কোচ: ম্যালকম উইনস্ট্রপ, এস মানিয়াম, সাইরাস পোঞ্চা
খেতাব: ব্রিটিশ জুনিয়র ওপেন (২০০৪),
পিএসএ ওরনাও ইন্টারন্যাশনাল (২০০৮),
পিএসএ আইসিএল চেন্নাই ওপেন (২০০৭, ২০০৮),
পিএসএ অটারস ওপেন (২০০৬)।
কৃতিত্ব: ২০১০ গুয়াংঝৌ এশিয়াডে দু’টি ব্রোঞ্জ,
২০০৬ দোহা এশিয়াডে ব্রোঞ্জ।
পুরস্কার: অর্জুন (২০০৭) |
|
|
নিজের থেকে র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটাই পিছনে থাকা বিশ্বের ছত্রিশ নম্বর মুসটোনেনের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টারে শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি সৌরভের। কলকাতা র্যাকেট ক্লাবের প্রাক্তন ছাত্র প্রথম দুই গেমে পিছিয়ে যান ৫-১১, ৮-১১। কিন্তু সেখান থেকে দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এসে পরের তিন গেম টানা জিতে ম্যাচ বের করে নেন ৫-১১, ৮-১১, ১১-৮, ১১-৪, ১১-২। বিশেষ করে শেষ দুই গেমে ফিলন্যাল্ডের প্রতিপক্ষকে প্রায় দাঁড়াতেই দেননি সৌরভ। পরে বলেন, “প্রথম দুই গেমে ওর আক্রমণের তীব্রতার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মেনে নিচ্ছি আমাকে পুরোপুরি অফ গার্ডে ফেলে দিয়েছিল ও। ফিরে আসার জন্য নিজের ভিতর থেকে সেরাটা টেনে বের করে আনতে বাধ্য হই।”
কলকাতায় জন্ম। পড়াশোনা লক্ষ্মীপত সিঙ্ঘানিয়া অ্যাকাডেমিতে। তবে স্কুলের পর্ব শেষ হওয়ার পর স্কোয়াশ-সাধনার জন্যই সৌরভ চলে গিয়েছিলেন চেন্নাই। সেখানে আইসিএল স্কোয়াশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন মেজর মানিয়াম এবং দ্রোণাচার্য পুরস্কার বিজয়ী জাতীয় কোচ সাইরাস পোঞ্চার কাছে। স্কোয়াশ দুনিয়ায় কোর্টে তাঁর ক্ষিপ্রতার জন্য বেশ নামডাক সৌরভের। ২০০৬ এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ জয়ী প্রথম স্কোয়াশ দুনিয়ার নজর কাড়েন অনূর্ধ্ব-১৯ ব্রিটিশ জুনিয়র ওপেন খেতাব জিতে। সে বার, এই ইংল্যান্ডেরই শেফিল্ডে মিশরের আর এক খেলোয়াড় আদেল আল সেইদ-কে হারিয়ে এসেছিল সৌরভের খেতাব। এ বার ফের ইংল্যান্ডের মাটিতে নতুন ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি।
অধুনা লিডস নিবাসী সৌরভ বলছেন, বিশ্বের এক নম্বরের মুখোমুখি হয়ে শুধু নিজের জন্য নয়, লড়বেন দেশের জন্যও। “বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাটা তো প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের দিকে আরও এক পা এগিয়ে যেতে পেরে আমি খুশি। তবে শেষ চারে ওঠার লড়াইটা শুধু নিজের জন্য নয়, আমার দেশের জন্যও জিততে চাইব। যাতে আমার পরে ভারতে আরও যারা এই খেলাটায় আসছে উদ্দীপ্ত হয়।” কলকাতার ছেলে বলছেন, “আমার সাফল্য যদি ভারতের মানুষের কাছে স্কোয়াশের আবেদন বাড়িয়ে তোলে, তার থেকে ভাল আর কিছু হবে না।”
সৌরভ আরও একবার ইতিহাসকে মুঠোয় পুরতে পারেন কি না, দেখার অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর দেশ। |
পুরনো খবর: ইতিহাসের সামনে সৌরভ
|