|
|
|
|
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন মেদিনীপুরে |
স্টেশন চত্বরে যুবককে কুপিয়ে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নৃশংসভাবে কুপিয়ে এক যুবককে খুন করা হল খাস মেদিনীপুর শহরে। বুধবার রাতে স্টেশন চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম তোতন ভট্টাচার্য (২৮)। স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে গেট বাজার এলাকায় তাঁর বাড়ি। এই ঘটনায় জেলার সদর শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরা সকলেই তোতনের পরিচিত-বন্ধুবান্ধব। যে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে ওই যুবককে খুন করা হয়েছে, সেটিও উদ্ধার হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই গোলমাল বাধে। ঠিক কী নিয়ে বিরোধ বেধেছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। জেলা পুলিশের দাবি, খুব শীঘ্রই ঘটনার কিনারা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে।
মেদিনীপুর স্টেশন চত্বর অত্যন্ত জমজমাট এলাকা। রাতের দিকে তুলনায় নির্জন হলেও একেবারে যে শুনশান থাকে তা নয়। শহরের বুকে এমন একটি এলাকায় খুনের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন তোতন। বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবেন। তবে তিনি আর ফেরেননি। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়িতে খবর আসে তোতন খুন হয়ে গিয়েছেন।
এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তোতন। বাবা বিমল ভট্টাচার্য শহরের একটি লজে কাজ করেন। মা সর্বাণীদেবী গৃহবধূ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তোতন। |
|
পারিবারিক অ্যালবামে তোতন (গোলাপি জামা)। —ফাইল চিত্র। |
বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল। বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ নির্মলবাবু যখন কাজ সেরে বাড়ি ফিরছেন, তখন ছেলের সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়। স্টেশন পাড়ায় দু’জনে একসঙ্গে চা খান। সর্বাণীদেবীর কথায়, “কারও সঙ্গে ছেলের শত্রুতা ছিল না। কী হল, কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন কী নিয়ে বাঁচব।”
যেখানে তোতনকে খুন করা হয়, তার একপাশে স্টেশন। অন্য পাশে রেল কলোনি। সব মিলিয়ে ১৮টি পরিবার থাকে এখানে। রেল কলোনির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তাঁরা চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন। তবে, বাইরে বেরোননি। কারণ, মাঝেমধ্যেই মদ্যপ যুবকেরা এমন চেঁচামেচি করে। পরে স্থানীয় লোকেরাই তোতনকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে বুধবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। আসেন আরপিএফের আইসি (মেদিনীপুর) আশিসকুমার পাণ্ডে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। রাতেই অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। একে একে চারজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যে মূল অভিযুক্তের নাম জানা গিয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় শহরের একাধিক এলাকায় তোতনকে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা গিয়েছে। এই যুবক তিনটি মোবাইল ব্যবহার করতেন। তিনটি ফোনেরই ‘কললিস্ট’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা, ‘কললিস্ট’ থেকেও ঘটনার কিনারা হতে পারে। সর্বাণীদেবী বলেন, “রাত বারোটার পরও ফিরছে না দেখে ওকে ফোন করি। ফোন বেজে যাচ্ছিল। তখনই সন্দেহ হয়। যারা ছেলেকে খুন করল, তাদের চরম শাস্তি চাই।”
স্টেশন এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, রাত হলেই আর সে ভাবে নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলে না। কয়েকটি চা দোকান খোলা থাকে মাত্র। কখনও কখনও পথবাতি জ্বলে না। অন্ধকার পথেই মানুষজন যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, রাতে হলেই স্টেশন চত্বরের আশপাশে মদের আসর বসে। আশপাশের এলাকার কিছু যুবক সেখানে ভিড় করেন। সব জেনেও রেল-পুলিশ নির্বিকার।
এ দিন দুপুরে গেট বাজার ও তার আশপাশে কয়েকটি চা দোকানে ভাঙচুর চালান এলাকার কয়েকজন যুবক। এই যুবকদের বক্তব্য, রাতের বেলায় এই সব দোকানে বহিরাগতদের ভিড় জমে। অসামাজিক কাজকর্ম চলে। ফলে, এলাকার মানুষও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকেন। মদ্যপদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। বুধবার রাতের ঘটনার পর অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে আরপিএফ। বৃহস্পতিবার সকালে আরপিএফের তরফে স্টেশন চত্বরে থাকা সব দোকান মালিককে জানানো হয়েছে, রাত দশটার পর আর দোকান খুলে রাখা যাবে না। মেদিনীপুর স্টেশন থেকে শেষ লোকাল ট্রেন ছাড়ে রাত ১০টা ২২ মিনিটে। ট্রেনটি খড়্গপুর যায়। আরপিএফের বক্তব্য, স্টেশন চত্বরের আশপাশে নজরদারিও বাড়ানো হবে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “বুধবার রাতে যে ভাবে এক যুবককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগের। রেল-পুলিশের উচিত, এখনই সতর্ক হওয়া।” |
|
|
|
|
|