|
|
|
|
গাঁধীর মতো থাকতে এক রাতে হাজার টাকা
সংবাদ সংস্থা • আমদাবাদ |
আমদাবাদের অদূরে একটি ছোট্ট গ্রাম। সেখানেই ‘কোছরাব আশ্রম’ গড়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। চলতি বছরের ২ অক্টোবর অর্থাৎ গাঁধীর জন্মদিনে পর্যটকদের জন্য সে আশ্রমের দ্বার খুলে দেন কর্তৃপক্ষ। গাঁধীর আদর্শে গড়ে ওঠা সহজ-সরল-নিয়মানুবর্তী আশ্রম জীবনের স্বাদ যাতে নিতে পারেন সাধারণ পর্যটকরা, সে জন্যই এই ভাবনা। তবে বিনামূল্যে নয়। প্রতি রাতের জন্য হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে অতিথিদের।
আশ্রম-কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের এ হেন অভিনব অভিজ্ঞতার একটি মানানসই নামও দিয়েছেন, “লিভ গাঁধী ফর আ হোয়াইল।” বাণিজ্যিক দিক থেকে নিঃসন্দেহে চোখ কাড়বে পর্যটকদের। স্বাধীনতাপূর্ব ভারতবর্ষের ইতিহাস যে ব্যক্তির হাত ধরে বদলেছিল, তাঁর মতো করে বাঁচা, হলই বা অল্প কিছু দিনের জন্য, তা-ই বা কম কী। আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অহিংসা, সংযম, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের মতো যে এগারোটি আদর্শের ভিত্তিতে জীবন কাটিয়েছেন গাঁধী, সেই আদর্শ অনুসরণ করেই আশ্রমে থাকতে হবে পর্যটকদের। চরকা কাটতে হবে, নিয়মিত প্রার্থনা এবং ধ্যান করতে হবে, আশ্রমের এলাকা পরিদর্শন করতে হবে, পরতে হবে হাতে তৈরি খাদির কাপড়। শুধু তা-ই নয়, উঠতে হবে সকাল পাঁচটায়। ঘরের কাজকর্মেও হাত লাগাতে হবে। ঠিক যেমনটি করতেন গাঁধী।
পুরো বিষয়টির নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, সেই নিশ্চলাভালাম্ব বারোত-এর মতে, “গাঁধীর সরলতা, গুণ, এবং সহনশীলতার আদর্শে সাধারণ মানুষকে বাঁচার সুযোগ করে দিতেই এই পরিকল্পনা।” হয়তো এই অভিজ্ঞতার পর, জীবন সম্পর্কে, সমাজ সম্পর্কে এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক রসদ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাবে, আশা বারোতের। যখন প্রথম এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ, তখন জানিয়েছিলেন, অন্তত ৫ দিনের জন্য আশ্রমে থাকতেই হবে পর্যটকদের। আর প্রতি রাতের জন্য দিতে হবে হাজার টাকা ভাড়া। নিয়ম অবশ্য এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। কিন্তু তার মধ্যেই উঠছে প্রশ্ন।
হাজার টাকার বিনিময়ে সহজ, সরল, বৈভবহীন জীবন কেন বাছবেন পর্যটকরা? ঝাঁ চকচকে হোটেল, খাবারের বাহুল্য, লাগামছাড়া জীবনে অভ্যস্ত আধুনিক মানুষ আদৌ কি আসবেন আশ্রমে চরকা কাটতে, তা-ও আবার অর্থের বিনিময়ে? ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে যখন প্রথম আশ্রমটি তৈরি করেন গাঁধী, তখন ভারত স্বাধীনতার খোঁজে দিশেহারা, বিধ্বস্ত। সে সময় যে আদর্শ শান্তি এবং সাফল্যের পথ দেখিয়েছিল, তা কি আজও একই রকম জনপ্রিয় হবে পর্যটকদের মধ্যে? অগ্রিম বুকিং-এর পরিসংখ্যান কী বলছে?
আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানালেন, এখনও পর্যন্ত কোনও বুকিং হয়নি। কিন্তু খোঁজ নিতে এ পর্যন্ত ফোন এসেছে বিস্তর। দেখেশুনে আশাবাদী গুজরাত বিদ্যাপীঠ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও গাঁধীর হাতেই তৈরি। আপাতত কোছরাব আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণের ভার গুজরাত বিদ্যাপীঠেরই হাতে। তাদের বিশ্বাস, সময় বদলালেও গাঁধী-আদর্শ আজও জনপ্রিয়, সময়োপযোগী। তা অনুভব করতে নিশ্চয়ই আশ্রমে পাড়ি জমাবেন সাধারণ মানুষ। |
|
|
|
|
|