সামনে বাস রাস্তা। পিছনে রেলপথ। অদূরে নদী। কার্যত দ্বীপের মতো অবস্থান করছে ময়ূরেশ্বরের নামো-কাঁন্দিয়াড়া প্রাথমিক স্কুল। বিপদের আশঙ্কা থাকলেও আজ পর্যন্ত স্কুলের চার পাশে পাঁচিল নির্মিত হয়নি। বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও পাঁচিল নির্মাণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
জেলা শিক্ষা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫২ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের দান করা ২০ শতক জায়গার উপরে গড়ে ওঠে নামো-কাঁন্দিয়াড়া প্রাথমিক স্কুলটি। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯৫। শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। পাঁচটি ক্লাসের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি রুম। স্বাভাবিক ভাবে দু’টি ক্লাসের পড়ুয়াদের কখনও বারান্দায় কখনও স্কুল চত্বরে বসাতে হয়। মিড-ডে মিলের জন্য কোনও ঘেরা যায়গা নেই। শুধু তাই নয়, ছেলেদের জন্য পৃথক শৌচাগারও নেই। ফলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাদের স্কুলের বাইরে যেতে হয়।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পিছনের হাওড়া-রামপুরহাট রেলপথ যেন স্কুলের গা ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। সেই পথ দিয়ে সব সময় ট্রেন ও মালগাড়ি চলাচল করে। ট্রেন যেন স্কুলের মাথার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে। স্কুলের সামনের দিক দিয়ে চলে যাওয়া বোলপুর-রাজগ্রাম সড়ক দিয়েও সব সময় ছুটে চলেছে বাস, ট্রাক-সহ নানা যানবাহন। |
শুধু তাই নয়, স্কুলের অদূরেই রয়েছে দাঁড়কা নদী। রয়েছে একটি পুকুরও। নদী ও পুকুরে বারো মাসই কমবেশি জল থাকে। তাই যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় সিঁটিয়ে থাকেন শিক্ষকেরা। সহকারি শিক্ষক রুপম দত্ত, দিলীপকুমার সাহা বলেন, “কখন ছেলেমেয়েরা রেলপথ কিংবা বাস রাস্তায় গিয়ে পড়ে সেই আশঙ্কায় আমাদের এক জনকে পঠনপাঠন ফেলে পাহারা দিতে হয়। রয়েছে, নদী কিংবা পুকুরে পড়ার আশঙ্কাও।” একই আশঙ্কা অভিভাবকদেরও। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল বলেন, “ছেলেমেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চরম চিন্তায় থাকি।” স্কুলপড়ুয়া তৃতীয় শ্রেণির অয়ন মণ্ডল, সমাপ্তি মণ্ডলরা বলে, “আমাদেরও ভয় ভয় করে। টিফিনের সময় খেলতে খেলতে আমরা রেলপথ কিংবা বাস রাস্তার ধারে চলে গেলে বকুনি খাই। স্কুলের পাঁচিলটা হয়ে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে খেলতে পারি।”
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলকবিহারি মণ্ডল বলেন, “প্রশাসনের সকল স্তরে পাঁচিলটি নির্মাণের জন্য বহু বার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু হচ্ছে হবে আশ্বাস শোনা ছাড়া কোনও কাজ হয়নি।” সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে যদি ওই পাঁচিল নির্মাণ সম্ভব হয়, তা হলে তার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের ক্ষমতার বাইরে হলে জেলা শিক্ষা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।” |