শতাব্দী না থাকায় জল্পনা
দলে বিরোধ মেটাতে আশিসের ডাক
ত কয়েক দিন ধরেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় তিনি ‘বিজয়া সম্মেলন’ করছেন। কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি জেলা নেতৃত্বের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দলের ডাকা জেলা কমিটির ‘বিজয়া সম্মেলনে’ ঘটল ঠিক উল্টোটাই। তৃণমূলের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, জেলায় দলের একমাত্র সাংসদ এই সময় দিল্লিতে থাকবেন বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার বোলপুর পুরসভা ভবনে তৃণমূলের ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা নেতৃত্বের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত নেতাই। এমনকী, উপস্থিত ছিলেন দলের অন্দরে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী বলে পরিচিত, সাংসদ-ঘনিষ্ঠ দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা। বাইরে থাকায় ছিলেন না অনুব্রত-বিরোধী বলে পরিচিত সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। এ দিন আশিসবাবু নিজে বারবার সব ‘মতান্তর’ ভুলে এক হওয়ার ডাক দিলেও এমন দিনে দিল্লিতে থেকে অনুপস্থিত থাকলেন সাংসদ শতাব্দী রায়। আর সেই ‘অনুপস্থিতি’ দলের অন্দরে পুরনো গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জল্পনাকেই ফের উস্কে দিল। বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি শতাব্দী। দলীয় কর্মসূচিতে সাংসদের অনুপস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি অনুব্রত। তবে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত সরকার বলেন, “জেলা কমিটির বিজয়া সম্মেলনে শতাব্দী-সহ অন্য নেতা-কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শতাব্দী জেলা সভাপতিকে আগেই জানিয়েছিলেন এই সময় তিনি দিল্লিতে থাকবেন।”
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, বিরোধী দলগুলি থেকে নেতা-কর্মীদের নিজের দলে টেনে এনে জেলা সভাপতি এক রকম ভাবে সংগঠন বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাতে দলীয় অন্দরেই একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
একান্ত আলোচনায় দুই নেতা। —নিজস্ব চিত্র।
এক নেতার যুক্তি, “লোক বাড়িয়ে সংগঠন বাড়ানো আর সংগঠনকে মজবুত করার মধ্যে পার্থক্য আছে। অন্য দল থেকে যাঁরা ঢুকছে, তাঁদের একটা বড় অংশই সুযোগ সন্ধানী। কে বলতে পারে, কাল আমরা সরকারে না থাকলে ওই অংশটাই ফের অন্যত্র সুযোগের সন্ধানে ছুটবে না!” তাঁর দাবি, জন্মলগ্ন থেকে যাঁরা তৃণমূল করছেন, তাঁরা কিন্তু বিপদেও দল ছাড়েননি। তাঁর ক্ষোভ, “কিন্তু বর্তমানে পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নন, বাইরে থেকে আসা লোকেরাই দলের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ পেয়ে যাচ্ছেন।” ফলে এই নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটা অংশের ক্ষোভ জেলা সভাপতি কোনও ভাবেই মেটাতে পারছেন না বলে তৃণমূলের ওই অংশের দাবি।
এ দিন অনুব্রত অবশ্য আগাগোড়া নিজের স্বভাবসিদ্ধ মেজাজেই ছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে বিরোধীদের কাছে বার্তা দেওয়ার একটা সুযোগ তাঁর কাছে ছিল। সেই সুযোগকে তিনি অনেকটাই কাজে লাগাতে পেরেছেন বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। শতাব্দী না থাকলেও তিনি হাজির করতে পেরেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী, একাধিক বিধায়ক, ব্লক নেতৃত্ব এবং পুরসভা ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজয়ী সদস্যদের। এমনকী, পাশে বসেছেন খোদ আশিসবাবুর। এরই সঙ্গে নতুন পালক বিরোধী দলগুলি (মূলত কংগ্রেস) থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীরা। সবাইকে নিয়ে খোশমেজাজেই আয়োজন করলেন দলের বিজয়া সম্মেলন। সেখানে তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশও দিলেন। যেখানে কড়া ভাষাতেই দলীয় কর্মীদের বললেন, “সরকারি দফতরে দলীয় পতাকা নিয়ে গিয়ে কোনও রকমের হাঙ্গামা বরদাস্ত করা হবে না।” আবার রাজ্য সরকারের নানা কাজের ফিরিস্তিও তুলে ধরলেন। উদ্দেশ্য লোকসভা ভোটের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলিত করে প্রচারের কাজ আরম্ভ করা।
এ দিকে অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে জেলা সভাপতির পাশে বসেই রামপুরহাট মহকুমার সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে দলের খারাপ ফলের দায় স্বীকার করলেন জেলা চেয়ারম্যান। পাশাপাশি এ দিনই আশিসবাবু মঞ্চ থেকেই মুরারই ২ ও নলহাটি ২ ব্লক নেতৃত্বে রদবদলের কথাও ঘোষণা করে দিলেন। গত কয়েক মাস ধরেই অনুব্রতর সঙ্গে তাঁর ‘মনোমালিন্য’ মেটা যে শুরু হয়ে গিয়েছিল, তা আশিসবাবুর কথা থেকেই কতকটা স্পষ্ট হয়ে গেল। বললেন, “অতীতে দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতান্তর হলেও কোনও দিনই মনান্তর হয়নি।” একই সঙ্গে জেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলা সভাপতিরও দরাজ হাতে প্রশংসা করলেন। কার্যত অনুব্রতর সুরেই নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁরও ফতোয়া, “দলের পতাকা হাতে নিয়ে বিদ্রোহের গান গাওয়া চলবে না। দলে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। তা সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানাতে হবে। তদন্ত করে তার প্রতিকার করা হবে। কিন্তু বিদ্রোহ নয়।”
নিজেদের বক্তব্যে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রীও। নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাঁদের পরামর্শ, আরও সংযত হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ দিনই সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণে সমস্যা মেটাতে প্রতি ব্লকে পাঁচ সদস্যের একটি করে কোর কমিটি গঠনের কথা জানান মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। পঞ্চায়েত, পুরসভা আর বিধানসভা নিয়েই সন্তুষ্ট না থাকার কথা বলেন রাজ্যের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। তাঁর কথায়, “এখনও পার্লামেন্ট দখল করা বাকি রয়েছে। সেই উদ্দেশ্য সফল হলেই সম্পূর্ণ ‘সেলিব্রেশন’ হবে।” এ দিনই অনুব্রত ছাত্রপরিষদ নেতা সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি রূপে ঘোষণা করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.