মঞ্চে বক্তা পোপ ফ্রান্সিস। সামনে মুগ্ধ শ্রোতাদের ভিড়। কিন্তু পোপের গুরুগম্ভীর কথাবার্তাতে কি মন লাগে খুদে শ্রোতার? অগত্যা তাই নতুন খেলা। হঠাৎই শ্রোতার আসন ছেড়ে পোপের মঞ্চে উঠে পড়ল সে। মঞ্চেই খানিক ক্ষণ ঘোরা ফেরা, অবশেষে পোপের আসনে গা এলিয়ে দেওয়া। গত শনিবার রাতে সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমনটাই করল এক খুদে। দেখেশুনে মিটিমিটি হেসেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
আসলে, শনিবার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যারে ‘পরিবার দিবস’ উপলক্ষে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন পোপ। সামনে দর্শকাসনে তখন প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, আবার সদ্য মা-বাবা হয়েছেন এমন তরুণ-তরুণীরাও। আর মঞ্চে ছিলেন পরিবারের বৃদ্ধতম সদস্যরা অর্থাৎ ঠাকুরদারা। পোপের বক্তৃতাতেও ছিল এঁদের কথা। পরিবার গড়তে, ছোটদের ঐতিহ্যের পাঠ দিতে ঠাকুরদাদের ভূমিকা নিয়েই কথা বলছিলেন পোপ।
আর ঠিক এমন সময়ই ঘটল সেই মজার ঘটনা। শ্রোতার আসনে আর বসে থাকতে পারল না এক খুদে। বড়দের এই তত্ত্বকথা আর কাঁহাতক ধৈর্য ধরে শোনা যায়? চোখরাঙানির ভয়ে তা-ও কষ্ট করে আসনে সে কিছু ক্ষণ বসেছিল। কিন্তু আর না। এ বার কিছু করতে হবে। |
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। হাতের কাছে খেলার যখন কোনও উপকরণ নেই, তখন পোপের মঞ্চকেই খেলার ময়দান করে ফেলল খুদে। রক্ষীদের নজর এড়িয়ে সটান চড়ে পড়ল মঞ্চে। প্রথমে ছিয়াত্তর বছরের বক্তাটির দিকে তাকিয়ে রইল কিছু ক্ষণ। ড্যাবড্যাব চোখে। কিন্তু না, ওঁর কথা তো কিছুই বোঝা গেল না। অতএব নতুন মজা। মঞ্চের উপরই আজব কায়দায় হেঁটে বেড়ালো। কখনও বা তারকাসুলভ ভাবে হাত নাড়ল সামনের দর্শকদের দিকে। দর্শকদের তো তখন চোখ গোলগোল, শুরু হয়েছে ফিসফাস। তামাম ক্যাথলিক জগতের প্রধানের বক্তৃতায় এমন অবজ্ঞা? পোপ কী করবেন? হলই বা সে ছোট, কিন্তু এ তো এক রকমের প্রথা ভাঙাই বটে। মঞ্চ থেকে নামাতে তখন পাশ থেকে রক্ষীরা চকোলেটের প্রলোভন দেখাচ্ছে ওই খুদেকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎই পোপের চেয়ারে বসে পড়ল সে।
শ্রোতারা তখন প্রায় নীরবে ‘হায়, হায়’ করছেন। কিন্তু হলুদ টি-শার্ট পরা খুদেটি তখনও নিজের মনে। আর পোপ? মিটিমিটি হাসছেন। গোটা পর্বটিতে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্যেই হেসে গিয়েছেন তিনি। মাঝখানে এক বার আহ্লাদে পোপের পা জড়িয়ে ধরেছিল খুদে। তখনও চলছে বক্তৃতা। আর তার ফাঁকেই একটু যেন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন পোপ। কিছুটা যেন ঠাকুরদাসুলভ প্রশ্রয়েই। |