ঘরোয়া বিরোধিতায় প্রায় খারিজ হওয়ার মুখে নাটকীয় মোড় নিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রস্তাবিত কলম্বো সফর। সরাসরি মনমোহনকে চিঠি লিখে তামিল অধ্যুষিত জাফনা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার নর্দার্ন প্রভিন্স-এর মুখ্যমন্ত্রী। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন আজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে এই আমন্ত্রণপত্রটির একটি ভূমিকা থেকে যাচ্ছে।”
কমনওয়েলথ গোষ্ঠীভূক্ত দেশগুলির সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা পাড়ি দেবেন কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু সূত্রের খবর, ঘরোয়া বাধা কাটিয়ে এই সফরের সম্ভাবনা বেশ কিছুটা উজ্জ্বল করে তুলেছে এই এক চিঠি। তামিল আবেগকে গুরুত্ব দিতে চেয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব গোড়া থেকেই সফরের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু খাস জাফনা সফরের আমন্ত্রণ আসায় এ বার বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে বাধ্য হচ্ছে দল ও সরকার।
এডিএমকে-ডিএমকে-সহ দক্ষিণ ভারতের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল এই সফরের ঘোর বিরোধী। তাদের বক্তব্য, শ্রীলঙ্কার বহু জায়গায় তামিলদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত। এলটিটিই-কে নিকেশ করার পরে যুদ্ধ মিটলেও তামিলদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করেনি রাজাপক্ষে সরকার। তামিলদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার বিষয়টিরও কোনও সুরাহা হয়নি। ঘরোয়া এই চাপের পাশাপাশিই আবার দক্ষিণ ভারতের সুরক্ষার প্রশ্ন, ভারতীয় মৎসজীবীদের ভবিষ্যৎ, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ভারতের কাছে কলম্বো এই মূহূর্তে কম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য নয়। এই সফরে না গিয়ে রাজাপক্ষে সরকারের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি করাটা আদৌ কাম্য নয় বিদেশ মন্ত্রকের কাছে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এই উভয়সঙ্কট থেকে বেরোনোর জন্য সূত্র খোঁজা হচ্ছে পুরোদমে। রাজাপক্ষে সরকারও নয়াদিল্লির বাধ্যবাধকতার দিকটি বোঝে। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে তামিল আবেগকে আঘাত করা মনমোহন সিংহের পক্ষে যে রাজনৈতিক ভাবে অস্বস্তিকর, সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে সে দেশের সরকারকে। তার পরেই এই সমাধানসূত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোনও দেশের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন এমন ঘটনা কূটনীতিতে বিরল। কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমেই দু’টি দেশের মধ্যে যাবতীয় যোগাযোগ হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমন বিরল ঘটনা ঘটল কী ভাবে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, “ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। ভারত সে দেশের নর্দার্ন প্রভিন্স-এর তামিলদের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট। সম্পর্কের এই দিকটিই এই আমন্ত্রণে প্রতিফলিত হয়েছে।” তবে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে যে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তা আজ জানিয়ে দিয়েছেন আকবরুদ্দিন। তাঁর কথায়, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নভেম্বরের ১৫ তারিখ শুরু হবে সম্মেলন। তার আগে জাতীয় স্বার্থ, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং বিদেশনীতি সব বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |