|
|
|
|
পাচারে ভাটার টান, জলসার জাঁকজমক ম্লান খনি অঞ্চলে
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • রানিগঞ্জ |
রেওয়াজটা দীর্ঘ দিনের। পুজোর মরসুমে আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে নানা জলসার আসর বসত। বলিউডের গোবিন্দা, বিনোদ রাঠৌর থেকে টলিউডের প্রসেনজিৎ, দেবশ্রী, দেব, শুভশ্রী, কে না এসেছেন?
আজ সেই আসর নেই। বছর দুয়েক আগেই শুরু হয়েছে ভাটার টান, এ বছর খনি অঞ্চল রীতিমতো স্তিমিত। যে সব পুজো উদ্যোক্তারা ২০১০ পর্যন্ত বড় বড় তারকাদের এনে তাক লাগিয়েছেন, চুপচাপ তারাও।
কেন এমন দশা? তৃণমূল নেতা প্রকাশ মাহাতো, অভয় উপাধ্যায়দের দাবি, আগে চোখ-ধাঁধানো জলসার পয়সা জোগাত কয়লা পাচারকারীরা। এলাকার মানুষের একাংশের দাবি, অবৈধ কয়লা কারবারে পুলিশ রাশ টানাতেই এমন হচ্ছে। ২০১১-তে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হয় আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। তার পরে বহু অবৈধ খাদান বন্ধ করেছে পুলিশ। পাচারকারীদের পকেটে টান পড়তেই কমেছে অনুষ্ঠানের জৌলুস।
এ কথা মানতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা। তাঁদের দাবি, টিকিট কেটে জলসা দেখার লোক জুটছে না। অন্ডালের বহুলা ইউনিয়ন ক্লাবের প্রবীণ কর্তা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কয়লা কারবারের পয়সায় অনুষ্ঠান হত না। তবে এলাকার লোকের হাতে পয়সা থাকায় জলসার চড়া দামের টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। ২০১১ থেকে সেই ভরসা আর পাচ্ছি না।” চিচুড়িয়া সুভাষ সমিতির সদস্য গৌতম চক্রবর্তীর মতে, “আগে আড়াই হাজার খাদান চলত এলাকায়। এখন তা বন্ধ। তার একটা অর্থনৈতিক প্রভাব তো পড়েছেই।” বীজপুর উদয় সঙ্ঘের সুশান্ত মালিকের কথায়, “২০১০ থেকে অনুষ্ঠানের টিকিট ছিল ৫০০০, ২০০০ ও ১০০০ টাকার। সেই জলসা করে লাভ হয়েছিল। পরের বার আর ভরসা পাইনি। ছোট অনুষ্ঠান হচ্ছে।”
কত ছোট? বহুলা ইউনিয়ন ক্লাব ২০১-তেও এনেছিল রবিনা ট্যান্ডনকে। পরের বছর থেকে লোকসঙ্গীতই ভরসা। ২০১০-এ রানিগঞ্জের সিহারসোল স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ প্রাচীন কালীপুজোয় এসেছিলেন জিৎ। সে বছর রানিগঞ্জ রেল মাঠে অশোক সঙ্ঘের পুজোয় বসেছিল ভোজপুরি গানের আসর। জামুড়িয়ার বীজপুর উদয় সংঘ কোয়েল মল্লিক ও মিতা চট্টোপাধ্যায়কে এনেছিলেন। জামুড়িয়ার চিচুড়িয়া সুভাষ সমিতিও সে বছর এসেছিলেন অলকা ইয়াগনিক ও রবিনা ট্যান্ডন। এ বছর এঁদের অনুষ্ঠান হয় বাতিল, নইলে নেহাত নিয়মরক্ষা। একই পরিস্থিতি সালানপুর, কুলটি, বরাকরের পুজোর। জলসা-যাত্রার বুকিং এজেন্ট ভক্তি মাহাতো বলেন, “খনি অঞ্চলে ২০১০-এর তুলনায় জলসা, যাত্রার বুকিং কম।”
কাটছাঁট হয়েছে পুজোর জাঁকজমকেও। রানিগঞ্জ জেকে নগর পল্লিমঙ্গলের ৩৬ ফুটের কালী প্রতিমা আট ফুট। রূপনারায়ণপুরে অগ্রগতি সঙ্ঘের বাজেট অর্ধেকেরও কম।
সিপিএমের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্ত বলেন, “পুজো, জলসার বাজেট কমার পিছনে কয়লার বিষয়টি কারণ হতে পারে। কিন্তু কয়লা পাচার বন্ধ, এ কথা ঠিক নয়।”
আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়া বলেন, “কয়লা চুরি বন্ধে অভিযান চলছে। ফলও মিলছে। তবে এর সঙ্গে পুজোর সম্পর্ক আছে কি না, জানি না।”
|
|
|
|
|
|