রোগী বমি করে হাসপাতালের মেঝে ভাসাচ্ছেন। রোগীর পরিবারের লোকজনও সেখানে রয়েছেন। নার্সকে বমি পরিষ্কার করতে অনুরোধ করায়, নার্সের সাফ জবাব: “আমি এক জন গ্র্যাজুয়েট। আমি কোনও নোংরা ঘাঁটতে পারব না।” ব্রিটেনে লেবার পার্টির এক মহিলা এমপি-র পেশ করা রিপোর্টে দেশের হাসপাতালের এমন ছবিই ফুটে উঠেছে।
সম্প্রতি রিপোর্টটি ব্রিটেনের স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশ করেছে। গত ছ’মাসে প্রায় দু’হাজার পাঁচশো অভিযোগের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন লেবার পার্টির মহিলা বিধায়কর অ্যান ক্লয়েড। এই কাজে অ্যানকে সাহায্য করেছেন শিক্ষিকা ট্রিসিয়া হার্ট। রিপোর্টটি থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে, ব্রিটেনের হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঠিক কী রকম ব্যবহার করেন।
গত বছরই অ্যান ক্লয়েডের স্বামী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করাতে হয়েছিল ব্রিটেনের নামকরা একটি হাসপাতালে। এমপি হয়েও অ্যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও বিশেষ সুযোগসুবিধা পাননি। উল্টে অন্যদের মতোই স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েওছিলেন নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। ঠিক কী ভাবে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর।
অ্যানের স্বামী ওয়েন রবার্ট নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁকে পাতলা দু’টি কাপড়ের টুকরো গায়ে দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। ঠান্ডায় কাঁপছিলেন ওয়েন। অ্যান সে কথা নার্সকে বলতে গেলে তাঁর কথার কোনও আমল দেননি নার্স। এ সব দেখে ভেঙে পড়েন অ্যান। তিনি আরও বলেন, “ওয়েনের তখন অক্সিজেন চলছিল। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর যে ঠান্ডা লাগছিল সে কথা হাত নাড়িয়ে তিনি বোঝাতেও চেয়েছিলেন। নার্সদের বার বার বলাতেও কাজ হয়নি। তার কয়েক ঘণ্টার পরই মৃত্যু হয়েছিল ওয়েনের।”
এ তো গেল অ্যানের নিজের অভিজ্ঞতার কথা। অন্য এক রোগীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, রোগীর অবস্থা জানার জন্য নার্সের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তো হতবাক তিনি। নার্সরা সবাই একজোট হয়ে অনলাইন নিলামে যোগ দিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও কথা তাঁরা শোনেননি। নিলাম শেষ হওয়ার পরই রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে রিপোর্টটিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই সব অভিযোগ শুনেই এক অবসরপ্রাপ্ত নার্স বললেন, “আগে এই সেবামূলক কাজটা আমরা মন থেকে করতাম। কিন্তু এখন কেউ আর সে ভাবে না।”
রিপোর্টটিতে শুধুমাত্র যে নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তা কিন্তু নয়। নার্সদের পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকদের নামেও। সংবাদ মাধ্যমকে অ্যান জানিয়েছেন, গত বছর স্বামীকে হারানোর পর অনেকের সঙ্গেই এ প্রসঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। তার পরই তিনি জানতে পারেন শুধু তিনি একাই নন, দেশের আরও অনেকের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে। সোমবার এই রিপোর্টে হাসপাতাল-কর্মীদের এই সত্য সামনে আসার পর পরই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য দফতর। |