প্রয়োজনীয় সংখ্যায় নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অভাব রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর। শুধু এ সবই নয়, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবে হাসপাতালের মধ্যে বর্জ্য পড়ে থাকায় পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাতেও জেরবার হাসপাতালগুলি। এর ফলে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা ভীষণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জেলার গাইঘাটা ব্লকের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রধান ভরসা ঠাকুরনগরের চাঁদপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে তিরিশটি শয্যা রয়েছে। বহির্বিভাগে রোজ গড়ে ৫০০-৭০০ মানুষ দেখাতে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অভাব রয়েছে জিডিএমও (জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার)-র। শুধু তাই নয়, গোটা ব্লকের অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রর জন্যও নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন চার জন জিডিএমও রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বহির্বিভাগে রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসকেরা হিমসিম খান। বিএমওএইচ মহুয়া সরকার বলেন, “গোটা ব্লকেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ব্লকের জন্য ১৩ জন জিডিএমও থাকা প্রয়োজন। অথচ আছেন মাত্র ৮ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং জিডিএমও দেওয়ার জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য আরও ২ জন জিডিএমও পাওয়া গেলে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কাজ আরও ভালভাবে করা যেত।” |
জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জিডিএমও এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও অভাব রয়েছে। যারা মূলত হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের সাহায্য করেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের যাবতীয় কাজকর্মে তাঁদের লাগে। যথেষ্ট সংখ্যায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকার কারণে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী, দারোয়ানদের দিয়ে সে সব কাজ করাতে হচ্ছে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে হাসপাতালে ৪০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দরকার।” পাশাপাশি চিকিৎসার বর্জ্য রাখার মতো পরিকাঠামো সব হাসপাতালে এখনও তৈরি হয়নি। যেমন দেখা গেল, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে মর্গের পাশেই খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে চিকিৎসা বর্জ্য। যা কুকুর-বিড়ালে যত্রতত্র টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ।
জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জিডিএমও এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করেছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় কুমার আচার্য বলেন, “জেলাতেও এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং জিডিএমও মিলিয়ে ১২০ জন চিকিৎসক কম রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব রয়েছে সাড়ে চারশোর মতো। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ওই সব তালিকা নেওয়া হয়েছে। তাঁরাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’’ হাসপাতালে খোলা আকাশের নীচে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলে রাখা নিয়ে প্রলয়বাবু বলেন, ‘‘খোলা জায়গায় চিকিৎসা বর্জ্য ফেলে রাখা ঠিক নয়। এতে দূষণ ছড়ায়। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবের কারণে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতিদের বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রেো সমস্যা হচ্ছে। মুমুর্ষূ কোনও রোগী এলে তাঁকে বাধ্য হয়েই অন্যত্র রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু গাইঘাটাতেই নয়, অন্য ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এই সমস্যা রয়েছে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জিডিএমও-র। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বতর্মানে দু’জন বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিযসক প্রয়োজন। সুপার গয়ারামবাবুর বক্তব্য, “বিষয়টি সিএমওএইচকে জানানো হয়েছে।” প্রায় একই অবস্থা জেলার বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল ও বারাসত জেলা হাসপাতালেও।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জেলার গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে কাজ করতে তেমন উৎসাহিত নন, কলকাতার কাছাকাছিই থাকতে চান তাঁরা। সেই কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। |