স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাঁই কয়লা, আবাসনে বহিরাগতেরা
স্বাস্থ্যজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় ছ’মাস আগে। নতুন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকও এসেছেন আসানসোলে। খোলনলচে বদলে মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালের পরিকাঠোমা ও সুবিধা দেওয়ার খসড়া প্রকল্পও তৈরি। অথচ, অসুস্থ হলে মানুষ যেখানে প্রথমে ছুটে যান, মহকুমার সেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিষেবার বিন্দুমাত্র উন্নত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন মহকুমার বাসিন্দারা। স্বাস্থ্যকর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, পরিকাঠামো উন্নত করা হবে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিরও।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কী পরিস্থিতি, তা কিছুটা টের পাওয়া যায় আছে জামুড়িয়ার চুরুলিয়ায়। কবি কাজী নজরুল ইসলামের পত্নী প্রমিলার নামাঙ্কিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। কেন্দ্রটির পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করেছেন আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার সামর্থ্য তাঁদের নেই। কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে বাহাদুরপুর ব্লক হাসপাতাল বা আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে নিয়মিত যাওয়া সম্ভব নয়। তাই চুরুলিয়া-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য এই কেন্দ্রটি গড়া হয়েছিল। বংশগোপালবাবু অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কার্যত বহিরাগতদের দখলে চলে গিয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসক মেলে না। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও দেখা পাওয়া যায় না। রোগনির্ণয় কেন্দ্রও বন্ধ থাকে। সাংসদ বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আবেদন করেছি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানিয়েছি।” শুধু এটাই নয়, একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এ রকম হাল বলে দাবি তাঁর।
বোর্ড দেখে বোঝা দায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে তারাও চিন্তিত বলে জানান তৃণমূল নেতারা। সম্প্রতি বিএমওএইচ এবং মহকুমা প্রশাসনের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। দলের ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় বলেন, “আমরা উচ্চ নেতৃত্বকেও এ বিষয়ে বলেছি। আশা করি, দ্রুত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য ফিরবে।” তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ রোগী থেকে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কেউই সেখানে টিকতে পারেন না। ফলে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গিয়েছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আটটি আবাসন আছে। অথচ তাঁরা কেউই থাকেন না। উল্টে, সেগুলিতে ১৪টি পরিবার বাস করে, যাঁদের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনই এক বাসিন্দা মহম্মদ সিদ্দিক সাফ স্বীকার করেন, “১২ বছর এখানে রয়েছি। এলাকার অবৈধ খাদানের কয়লা কেনাবেচা করি।” আবাসনে জবরদখলকারীদের অধিকাংশই সেই কাজ করেন বলে দাবি করেছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেল, কিছু কিছু জায়গায় স্তূপ হয়ে রয়েছে কয়লার চাঁই। এখানেই শেষ নয়। এই দখলদারেরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন হুক করে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরের অবস্থা এমনই।
এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এই কয়লার ডিপো উৎখাত করে ঠিক মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হোক। স্থানীয় বাসিন্দা তথা কবি নজরুলের ভাইপো কাজি সাজাহার হোসেন বলেন, “আমরাই এক সময়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ার দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু এখন তেমন ভাল পরিষেবা মিলছে না। এখানে একটি ছ’শয্যার হাসপাতাল চালুর দাবি তুলেছি।” আংশিক সময়ের বদলে সর্বক্ষণের এক জন চিকিৎসক নিয়োগেরও দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আসানসোলের সিএমওএইচ মনিকাঞ্চন সাহা বলেন, “আমি নতুন এসেছি। তাই এই কেন্দ্রটি নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না। তবে মহকুমার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই উন্নয়নের কাজ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

চুরুলিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.