একশো দিনের কাজে আশানুরূপ সাফল্য না মেলায় অবশেষে নড়েচড়ে বসল নদিয়া জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু দৈনিক গড়ে পাঁচশো শ্রমদিবস তৈরি করার নির্দেশিকা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। চলতি আর্থিক বছরের শেষ ছ’মাস জেলা জুড়ে সেই লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে দৈনিক গড়ে ষাট হাজার শ্রমদিবস। কাজে গতি আনতে চাপ বাড়ানো হয়েছে নির্মাণ সহায়কদের উপরেও। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “প্রকল্পে গতি আনতে পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত নদিয়া জেলায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩৫২টি পরিবার গড়ে প্রায় ১৮ দিন করে কাজ পেয়েছে। তার মধ্যে ৫৬.৯৬ শতাংশ পরিবার ২৫ দিনের কম কাজ পেয়েছে। মহিলারা কাজ পেয়েছেন মাত্র ৩৩.৩৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে ২৪ লক্ষ ১০ হাজার ৩৮৩ দিন। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে জেলায় জব কার্ড পেয়েছে ৭ লক্ষ ১৬ হাজার ১০৬টি পরিবার। তার মধ্যে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত কাজ চেয়ে আবেদন করেছেন মাত্র ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৬০টি পরিবার। গত বছর অবশ্য কাজ করেছিল ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ২২০টি পরিবার। মোট শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল ১ কোটি ৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯১৯ দিন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নির্মাণ সহায়কদের উপর চাপ বাড়ানোর ফলে তাঁরাও বাধ্য হচ্ছেন কাজে গতি আনতে। তার সুফলও পেতে শুরু করেছি।” কী রকম? ওই কর্তা বলছেন, “২৫ সেপ্টেম্বর চাকদহের হিংনারা গ্রাম পঞ্চায়েত একদিনে ৯৯২টি শ্রমদিবস তৈরি করতে পেরেছে। ২২ অক্টোবর করিমপুর ২ ব্লকের দিঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েত একদিনে ১ হাজার ৭৫টি শ্রমদিবস তৈরি করতে পেরেছে।” গড়ে ২৬.৩৩ দিন কাজ করে জেলায় এখনও পর্যন্ত সব থেকে এগিয়ে রয়েছে হাঁসখালি ব্লক। গড়ে ১০.৯৯ দিন কাজ করে সব থেকে পিছিয়ে চাপড়া ব্লক।
তবে কাজের গতি নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা ‘আত্মতুষ্টি’তে ভুগলেও কাজের সাফল্য, মহিলাদের যোগদান ও কম দিন কাজ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য আদর্শ সময় হল এপ্রিল, মে ও জুন মাস। ওই সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে টানাপোড়েনে কাজের গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছিল। তারপর টানা বৃষ্টিতেও সে ভাবে কাজ করা যায়নি। ফলে ওই সময়টাতে আর পাঁচটা জেলার মতো নদিয়াও একশো দিনের কাজে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।”
এমন অবস্থায় কাজে গতি আনতে গিয়ে বেশ কিছু নির্মাণ সহায়ক কোপের মুখেও পড়েছেন। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “একই পঞ্চায়েতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত কিছু নির্মাণ সহায়ককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে অন্য নির্মাণ সহায়কদের উপরেও।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ সহায়ক বলছেন, “কাজ নির্ধারণ থেকে শুরু করে কাজের অনুমোদনের মতো যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা কিন্তু থাকে জনপ্রতিনিধিদের হাতে। শ্রমিক চিহ্নিতকরণের কাজটাও অনেক সময়ে তাঁরাই করেন। তাই আমাদের উপর শাস্তির খাঁড়া না নামিয়ে প্রশাসন যদি জনপ্রতিনিধিদের আরও উৎসাহিত করেন, তা হলে ফল মিলবে।”
নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলেন, “একশো দিনের কাজে নির্মাণ সহায়ক ও জনপ্রতিনিধি উভয়ের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবে নির্মাণ সহায়কদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “প্রকল্পের কাজে গতি আনতে নানা রকম উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন প্রধানদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চাপ বাড়ানো হচ্ছে নির্মাণ সহায়কদের উপরেও।’’
|