নজরে নদিয়া
দু’বছরে হয়েছে মাত্র ১১৯ কিলোমিটার রাস্তা,
তৈরি হয়নি গরিবদের আবাসও
জেলা পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তা জেলা শাসকের হাতে তুলে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। তাতে জেলার উন্নয়নে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে এই কথাই জোরের সঙ্গে বলছেন বামফ্রন্টের বক্তারা।
পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সদস্যরা পরিকল্পনা করেন। তার রূপায়ণ ও তদারকিতে অংশ নেন গ্রামের মানুষও। জেলা শাসকের হাতে ক্ষমতা দেওয়ায় সেই ব্যবস্থাটাই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের কাজ অন্যান্য জেলার তুলনায় দ্রুত পিছিয়ে গিয়েছে এই জেলা। জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাপতি সিপিএমের মেঘলাল শেখ বলেন, “জেলা শাসকের হাতে দেওয়ার পর বিভিন্ন প্রকল্প ক্রমাগত পিছিয়ে গিয়েছে। ঠিকাদার রাজ তৈরি হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের অন্ধকারে রেখে শুধুমাত্র বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে উন্নয়ন হয়নি, দলতন্ত্র কায়েম হয়েছে।
জেলা শাসকের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজ যে থমকে গিয়েছে, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে মেঘলাল বলেন, “পাঁচ বছরে জেলায় ৪৮৯ কিমি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম তিন বছরে ৩৭০ কিমি। আর বাকি দু’বছরে হয়েছে মাত্র ১১৯ কিমি। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের ছয়টি রাস্তার জন্য জেলা পরিষদ অতিরিক্ত এক কোটি বিয়াল্লিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করলেও সেই রাস্তা তৈরি হয়নি।”
নতুন শম্ভুনগরের রাস্তা বদলায়নি। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
জেলা পরিষদের নিজস্ব ছয়টি রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেলেও তার ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। তাঁর বিশ্বাস, জেলা পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়াটাই শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের কাছে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে।
তাঁর দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা চঞ্চল দেবনাথ বলেন, “সিপিএম জেলা পরিষদে চরম স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি করছিল। আর্থিক ক্ষমতা জেলা শাসকের হাতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তা থেকে মুক্ত হয়েছে জেলা পরিষদ।”
এই চাপান উতোরের মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষের সমস্যা। চাপড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়াতে রাস্তার অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দিন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় কাজ ঠিক মতো হয়নি, ঠিকাদার পাওয়া যায়নি বলে।
একশো দিনের কাজেও অবস্থা শোচনীয়। গড় দিন আগের চাইতে কমছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইট বলছে, ২০১০-১১ সালে যেখানে তিন লক্ষেরও বেশি পরিবার কাজ পেয়েছিল, ২০১২-১৩ সালে সেখানে পেয়েছে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবার। এ বছর এখনও অবধি গড়ে ১১ দিন কাজ হয়েছে, বলছে জেলা প্রশাসনসূত্র। একই দশা আবাসনের ক্ষেত্রেও। “ইন্দিরা আবাসে আমরা এক সময়ে রাজ্যে প্রথম ছিলাম। এখন আমরা ক্রমশ নীচে নামছি,” বললেন মেঘরাজ। জেলা পরিষদের হিসেবেও দেখা যাচ্ছে, ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে নদিয়ায় খরচ হয়েছে মাত্র ৬৭ শতাংশ টাকা। পাশের জেলা মুর্শিদাবাদই সেখানে ৯৯ শতাংশ টাকা খরচ করেছে।
সামগ্রিক বরাদ্দের খরচেও বেশ দুর্বল অবস্থা নদিয়ার। প্রায় ৩০ শতাংশ টাকাই খরচ হয়নি। এমনকী নিজস্ব তহবিল, যা সম্পূর্ণ নিজের মর্জিমতো উন্নয়নের কাজে খরচ করতে পারে জেলা পরিষদ, তারও অধিকাংশই খরচ হয়নি। পর্যটনের উন্নয়ন? সেখানেও সেই একই ব্যর্থতার আঁচড়। পলাশির যুদ্ধক্ষেত্র ও সমাধিক্ষেত্রের রাস্তায় তোরণ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৩৪ লক্ষ টাকা।
খরচের খতিয়ান (নদিয়া)
২০১২-১৩ সালের হিসেব
কিছু প্রকল্প যাতে এক টাকাও খরচ হয়নি
গত অর্থবর্ষে কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে
প্রকল্প হাতে মোট টাকা পড়ে আছে খরচ হয়েছে (%)
সম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা ২২ লক্ষ ১৪ লক্ষ ৩৫.৭৫
ইউনিসেফ ১.০৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ৩৮.৩৬
স্বজলধারা ২.৭০ কোটি ১.৬৩ কোটি ৩৯.৭০
রাজ্য প্রাণিস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০ লক্ষ ৬ লক্ষ ৪১.৪০
পূর্ত- সেতু ও কালভার্ট ৩৭ লক্ষ ১৯ লক্ষ ৪৯.২২
জেলা প্রশিক্ষণ ও সম্পদ কেন্দ্র ৯৮ লক্ষ ৪০ লক্ষ ৫৯.৩২
সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতর ১৭.৪৫ কোটি ৭.৪২ কোটি ৫৭.৪৭
রেশম চাষ ৯ লক্ষ ৪ লক্ষ ৬০.৭৯
ইন্দিরা আবাস যোজনা ৭৬.৭৪ কোটি ২৭.৯০ কোটি ৬৩.৬৫
সাংসদের উন্নয়ন তহবিল ১.৮৭ কোটি ৬৮ লক্ষ ৬৩.৬৫
টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন ২০.২৮ কোটি ৭.০৫ কোটি ৬৫.২২
ত্বরান্বিত গ্রামীণ জল সরবরাহ ১৬ লক্ষ ৬ লক্ষ ৬৫.৩৫
কৃষি বিপণন ৭.৬২ কোটি ২.২৫ কোটি ৭০.৪৮
সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ৮.৯৫ কোটি ২.৪৩ কোটি ৭২.৮৫
কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার
ম্যানেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভ
১.৬১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৭৮.০৩
বিপর্যয় মোকাবিলা ৩১ লক্ষ ১০০



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.