উত্তরের ভোটের দিকে নজর রেখে গত দু’দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ছিল কংগ্রেস। উত্তরের অধিকাংশ জেলায় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটির কথা মাখায় রেখেই গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল নেত্রীর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার নদিয়ার দেবগ্রামের স্টেডিয়াম মাঠের সভাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কংগ্রেস বিরোধীতা সেখানেও বাঁধা ছিল চড়া সুরে।
বিকেলে অধীর চৌধুরীর খাস তালুক বহরমপুরে এসে কংগ্রেস বিরোধীতার পাশাপাশি মমতা অবশ্য কবুলও করেছেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু প্রভাবিত এই জেলায় বিজেপিরও সমালোচনাও করেন তিনি।
মুসলিম ভোটারদের মন পেতে মমতা বলেন, “আমি দাঙ্গাকে ঘৃনা করি। এ বাংলায় কাউকে দাঙ্গা করতে দেব না। ভোট এলেই বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাস্তায় হাঁটে। ওদের রুখতে হবে।” |
এ দিন দুই জেলাতেই ‘কল্পতরু’ মমতার ঘোষণা, ধুবুলিয়ার টিবি হাসপাতালের জায়গায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হবে মেডিক্যাল কলেজ। কারিগরি শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী নদিয়ার প্রতিটি ব্লকে একটি করে আইটিআই তৈরির কথা ঘোষনা করেন। মহকুমা পিছু একটি করে সরকারি পলিটেকনিক গড়ার কথাও বলেন তিনি। নদিয়া জেলা হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরির জন্য ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান তৃণমূলনেত্রী। জেলায় দু’টি ‘ওয়াটার বটল প্লান্ট’ তৈরি হবে। যার মধ্যে হরিণঘাটায় ইতিমধ্যে একটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যটির কাজও শুরু হবে শিগগির। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালকে শয্যা সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে জেলার কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন ক্লাস্টার তৈরি করবে। দত্তপুলিয়ায় টেক্সটাইল হাব তৈরি হবে। কল্যাণী ও কৃষ্ণনগরে তৈরি হবে আইটি হাব। মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের জন্য সরকার কী কাজ করেছে তার লম্বা ফিরিস্তি দেন। তিনি জানান, চাকরিতে সংখ্যালঘুদের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ১৩-১৪ শতাংশ সংরক্ষণ করেছে। |
১ লক্ষ ৬০ হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়েছে। জেলার ৩৫টি মাদ্রাসাকে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই আরও সমসংখ্যক মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এক হাজার কবরখানায় পাঁচিল তোলা হবে। ১২টি মডেল স্কুল গড়া হবে, সার্কিট ট্যুরিজম তৈরি হবে। বহরমপুর শহরকেও তিনি মনের মত করে সাজানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, “আমি চাই এই শহরকে সুন্দরকে করে সাজিয়ে তুলব। কিন্তু আপনারা কাকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন?”
এ দিনের বহরমপুরের সভায় তিনি জানান, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের কথা ভেবে কোনও অবস্থাতেই রমজান মাসে ভোট করতে চায়নি। তিনি বলেন, “সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, আমরা রমজান মাসে ভোট চাই না। গত নভেম্বর মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত সিপিএম, কংগ্রেস ভোট করতে দেয়নি। এখন বলছে ভোট ভেস্তে দাও।” অধীর চৌধুরীর সাহায্যে কামদুনি-খোরজুনার ধর্ষিতার পরিবারের লোকজনের দিল্লি যাত্রাকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি দু’বার রেলমন্ত্রী ছিলাম। তখন কংগ্রেস বলত আরশোলা ঘুরছে কামরায়। এখন তো ভয়াবহ পরিস্থিতি। খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। জল পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরাখণ্ডে মানুষ বিপদে পড়েছে। আমি টাকা দিয়ে ট্রেন ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। আর দেখুন কত গুলো দালালকে ভাড়া দিয়ে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে। টাকা পয়সা দিয়ে কিছু মানুষকে কিনতে পারবে, কিন্তু সব মানুষকে পারবে না।” |