সম্মুখ সমরে মা-মেয়ে। আর আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই লড়াই ঘিরেই জমে উঠেছে বড়ঞা ব্লকের কুলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শিমুলিয়া গ্রাম। মা মালতী সাহা গ্রামের ১ নম্বর সংসদের তৃণমূলের প্রার্থী আর মেয়ে মামণি মণ্ডল ওই সংসদে কংগ্রেসের প্রার্থী। মা ও মেয়ে লড়াই হলেও আসলে মালতী দেবী মামণির সৎমা। গ্রামবাসীদের দাবি, “সৎমা হোক আর যাই হোক, মা-তো বটে।”
গ্রামের বটতলায় দুর্গামন্দিরের ডান দিকে মালতী দেবীর বাড়ি আর বাম দিকে মামণি দেবীর। গ্রামের ওই বটতলায় বসে মা-মেয়ের তরজা নিয়ে জমজমাট আড্ডায় মেতে বাসিন্দারা।
মালতী দেবী বলেন, “ছোট থাকতে ওদের মা মারা গিয়েছিল, আমি এই সংসারে এসে ওদের মায়ের অভাব বুঝতে দিইনি। তার এই প্রতিদান?” সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের প্রশংসা করে বলেন, “মেয়ে খুব ভাল। খাওয়ার বিষয়ে কোনও বাছবিচার নেই। যা রান্না করে দিতাম সেটাই খেত।” তবে মেয়ে বিপক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষোভে মালতীদেবী বলে ওঠেন, “ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হব, সেটা ভোটের তিন চার মাস আগে থেকে ঘোষণা হয়েছে। সেই মতো প্রচারও শুরু হয়েছিল। সব জেনেশুনেও মেয়ে কেন প্রার্থী হল!” |
আর কংগ্রেস প্রার্থী মেয়ে মামণি দেবীর দাবি, “আমিই কিন্তু মনোনয়নপত্র আগে জমা দিয়েছিলাম। এবং জমা দেওয়ার পর বাপের বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে বলে এসেছি। তার পরেও মা কেন প্রার্থী হল জানি না।” তিনি আরও বলেন, “মা আমাকে জিজ্ঞাসা করে ভোটে দাঁড়াতে কী কী কাগজপত্র লাগবে। সে সব কিছুই আমি বলে দিলাম। তখনই বুঝতে পারি মা দাঁড়াবে।”
কীভাবে চলছে তাঁদের প্রচার?
জয়ের বিষয়ে আশাবাদী মালতীদেবী বলেন, “ওই সংসদে গত পঞ্চায়েতে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। এই এলাকায় তৃণমূলের সমর্থকই বেশি। তা ছাড়া, রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূলই আছে। উন্নয়ন যদি করতে পারে তো তৃণমূলই পারবে।” মামণিদেবীর স্বর ততটা জোর নয়। তবু মাথা নিচু করে বলেন, “গ্রামে তৃণমূল সেভাবে কোনও উন্নয়নই করেনি। যদি আমি জিতি তাহলে গ্রামের সকালের জন্য কাজ করব, এটুকু বলতে পারি।”
প্রচারের সময় তো আ হাতে বেশি নেই। বিরোধী দুই পক্ষ কি গিয়েছিলেন পরস্পরের বাড়ি? মামণিদেবী বলেন, “ভোটে দাঁড়ানোর পর মা একবারের জন্য আমার বাড়িতে এসে বলেনি ভোট দেওয়ার জন্য। আমি কিন্তু দু’বার গিয়েছি। আবার যাব।” আর মেয়ের দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে মালতী দেবী বলেন, “ও আসতে পারে, আমি যাব না।” মালতী দেবীর স্বামী তথা মামণি দেবীর বাবা অর্জুন সাহা অবশ্য স্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, “মেয়ে ভালবেসে বিয়ে করেছে। আপদে-বিপদে আমার পাশে স্ত্রীই দাঁড়াবে। স্ত্রীর হয়েই ভোট করেছি।” |