তিন বছরে পথ হয়নি, খালপাড়ে ঘনাল বিপদ
রোজ টিউশন থেকে প্রায় নির্জন রাস্তা দিয়ে ফিরতে হত মেয়েটিকে। জনবহুল একটা রাস্তা থাকলেও তিন বছরে তা পুরোপুরি তৈরিই হয়নি। একে তো ধানখেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা, তার উপর বিরাট বিরাট গর্ত। সাইকেল একবার পড়লে আর রক্ষে নেই। তাই বাধ্য হয়ে নির্জন রাস্তাটাই বেছে নিতে হয়েছিল নবাবহাটের ওই কিশোরীকে।
এত দিন গ্রামবাসীরা একাধিকবার দিঘির পাড় থেকে সেচখাল পর্যন্ত ওই রাস্তা সারানোর আবেদন করেছেন। বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে রাস্তা চিহ্নিত করে কাজ শুরুও করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরে হঠাৎই কাজ থমকে যায়। এত দিন পরে ওই কিশোরীর অমর্যাদা ও জীবনের বিনিময়ে ফের শুরু হল সেই রাস্তার কাজ। মেয়েটির মায়ের আক্ষেপ, “রাস্তাটা যদি আগে থেকেই ভাল হত, তাহলে আমার মেয়ের হয়তো এমন পরিণতি হত না।”
বুধবার ওই রাস্তাটির পাশে ইট পাথর জড়ো করা হয়। খুঁটি পুঁতে রাস্তাটিকে চিহ্নিতও করা হয়। পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে রাস্তার কাজ শুরু হবে। বর্ধমান জেলা পরিষদের ২৭ নম্বর আসন থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য নুরুল হাসান ও স্থানীয় বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবু গৃহ বুধবার ওই ওই কিশোরীর বাড়িতে যান। সেখানেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রাস্তার বেহাল দশার কথা শোনেন তাঁরা। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে রাস্তা সংস্কারের জন্য মালপত্র ফেলতে বলেন পঞ্চায়েতকে। নুরুল হাসান বলেন, “তিন বছর ধরে রাস্তাটি বেহাল পড়েছিল। গিয়ে শুনলাম, মেয়েটি ওই রাস্তা ব্যবহার করতে পারলে এভাবে প্রাণটা যেত না। সাত দিনের মধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।” রাস্তা সংস্কারের পরে ওই কিশোরীর নামে রাস্তাটির নাম রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন দিঘির পাড়ের বাসিন্দারা। স্থানীয় শেখ মনিরুল, শেখ কালোরা বলেন, “রাস্তার বেহাল দশার জন্যই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নবাবহাটের সেচখালের রাস্তা ব্যবহার করতে হত ওই কিশোরীকে।”
এই ধানজমির উপর দিয়েই তৈরি হবে নতুন রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
ওই কিশোরাকে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সোচ্চার হয় এ দিন। কংগ্রেসের নেতারা মেয়েটির বাড়িতে যান। বিজেপি, নাগরিক মঞ্চ, ডিওয়াইএফ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। জেলাশাসক, মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অনেক সংগঠন। বর্ধমানের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনও জেলাশাসকের কাছে দোষীদের সাজা দাবি করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।
এ দিন পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত আরও তিন জনকে ধরে। ধৃতদের নাম শেখ পিন্টু ওরফে সৈফুদ্দিন, শেখ ইয়াসিন ও শেখ দিলীপ ওরফে আসগর। প্রথম জনের বাড়ি নবাবহাটে। অন্য দু’জন শিবপুর দিঘির পাড়ের বাসিন্দা। এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানিয়েছেন, আগের দিন ধৃত তিনজনকে জেরা করেই এদের খোঁজ মেলে। পুলিশ ওই ছ’জনের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৫, ৩০২, ২০১, ৩৪ ও ৩৭৬ ধারায় মামলা শুরু করেছে। বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়, সিউড়ি রোডের পাশে ওই নির্মীয়মাণ নার্সিংহোমেই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পুলিশের অনুমান, ধর্ষণের পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু মেয়েটি তাদের চিনে ফেলেছে এই ভয়ে তাকে খুন করে অভিযুক্তেরা।
তবে সোমবার সকালে যে তিন জনকে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল তাঁদের মধ্যে থাকা শেখ মিলন যে এ কাজ করতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কমলসায়র এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, মিলন এলাকায় জনপ্রিয়। প্রায়ই বিভিন্ন দল মিলনকে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেত। সে দিনও গোলমাল হচ্ছে শুনে মিলন আরও কয়েকজনের সঙ্গে ওখানে গিয়েছিল। কিন্তু নবাবহাটের এক দল লোক ঠিক ভাবে যাচাই না করেই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলে তাঁদের অভিযোগ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.