বছর দশেক আগেও সেই জায়গায় ফসল ফলত। এখন তার উপর দিয়ে বয়ে যায় দামোদর।
প্রায় প্রতি বছরই খানিকটা করে এগিয়ে আসছে নদ। পাড়, ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে জলে। দামোদরের গর্ভে চলে যাচ্ছে কৃষিজমিও। গত কয়েক বছর ধরেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন গলসি ১ ব্লকের অমরপুর, নবঘণ্ট ও বিড়িনপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দামোদরের পাড়ের ভাঙন রুখতে প্রশাসন শীঘ্র কোনও পদক্ষেপ না করলে অদূর ভবিষ্যতেই তাঁদের এলাকা ছাড়তে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমরপুর, নবঘণ্ট, বিড়িনপুর গ্রাম থেকে এখন দামোদরের দূরত্ব মাত্র ৫০ মিটার। বাসিন্দাদের দাবি, দামোদরের ওপারে বাঁকুড়ায় বালির বাঁধ দেওয়ার ফলে গতিপথ পাল্টেছে দামোদর। এখন তা বয়ে চলেছে গলসি ১ নম্বর ব্লকের ওই গ্রামগুলির পাশ দিয়ে। গ্রামবাসীরা এক সময় যেখানে চাষ করতেন, বর্তমানে সেখানে শুধুই জল। অমরপুরের বাসিন্দা মলয় পাল জানান, আস্তে আস্তে দামোদর এগিয়ে আসছে গ্রামের দিকে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভেঙেছে দামোদরের পাড়। ডিভিসির ছাড়া জলে বেড়েছে নদীর জলও। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের অনেকের কৃষিজমি তলিয়ে গিয়েছে দামোদরের গর্ভে।
|
গলসি ১ ব্লকের অমরপুর গ্রামে পাড়ের ভাঙন। —নিজস্ব চিত্র। |
গ্রামবাসীর আশঙ্কা, দামোদরের পাড় ভাঙতে ভাঙতে যে কোনও দিন এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়বে জল। তাহলে বহু পরিবারের তখন গ্রামছাড়া হওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকবে না। অধিকাংশ গ্রামবাসীই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। অমরপুরের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা অনিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত দু’বছর ধরে এলাকার প্রায় ২০০ বিঘা জমি দামোদরের গর্ভে চলে গিয়েছে। এই সমস্ত জমি দু’ফসলি বা তিন ফসলি। অনিলবাবু বলেন, “আমাদের পরিবারের প্রায় সাত-আট বিঘা জমি এই দু’বছরে নদীতে মিশে গিয়েছে। এখনও যেটুকু বাকি আছে তা-ও এই ভাঙনের কবলে পড়বে।” অনিলবাবুর দাবি, তাঁরা গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে এই সমস্যার কথা জানিয়ে পাঁচ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
বর্তমানে অমরপুর গ্রামের চোঙপাড়া এলাকায় দামোদর প্রায় গ্রামের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে রাত জাগছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই ভাবে চলতে থাকলে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। সম্প্রতি ডিভিসি-র ছাড়া জলে নবঘণ্ট গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে জল ঢুকে পড়েছিল। যদিও পরে তা বের করে দেওয়া হয়।
ভাঙন প্রসঙ্গে গলসি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন কী ভাবে রোধ করা যায় তার ব্যবস্থা করব।” |