টানা বৃষ্টির পর আকাশে রোদের দেখা পেতেই আসানসোলের শতাব্দী শিশু উদ্যানে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা অরুণ সেনগুপ্ত। কিন্তু পার্কে এসে মন খারাপই হয়ে গেল তাঁর। গোটা পার্কে খুদেদের খেলার সামগ্রী যেমন হাতে গোনা, তেমনই বন্ধ বড় জলাশয়ে নৌকা বিহার। পাঁচিলের বিভিন্ন অংশে গর্ত। নেই নিরাপত্তারক্ষী।
রেল শহর আসানসোলে রেলের পক্ষ থেকে তৈরি হয়েছিল শতাব্দী শিশু উদ্যান নামে এই পার্ক। ১৯৮৯ সালের ৭ এপ্রিল সাড়ে ৬ একর এলাকা জুড়ে তৈরি এই পার্কটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রেল প্রতিমন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়া।
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্কটি তৈরির সময় এখানে ছিল দুটি করে হরিণ, ময়ূর ও বাঁদর। বিভিন্ন খাঁচায় ছিল নানা প্রজাতির পাখি, খরগোশ, হাঁস। একটি অ্যাকোরিয়ামে ছিল বাহারি মাছ। খুদেদের খেলার জন্য ছিল একটি ক্যাটারপিলার, একটি কলোম্বাস (নৌকার মতো দোলনা), একটি ড্রাগন, একটি ট্রয় ট্রেন, দোলনা ও স্লিপার। পার্ক সংলগ্ন ৮৬ বিঘার একটি জলাশয়ের অর্ধেক এলাকা জুড়ে চলত প্রায় ২৫টি নৌকা।
এখন পরিস্থিতি গিয়েছে বদলে। গোটা পার্কে এখন রয়েছে কয়েকটি খরগোশ এবং চারটি হাঁস। বড় জলাশয় সংলগ্ন পাশের ছোট পুকুরে চলে মাত্র দু’টি নৌকা। পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, রেল প্রায় পনেরো বছর এই পার্কের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করেছিল। নিরাপত্তার জন্য পার্কে আরপিএফের ক্যাম্প ছিল। কিন্তু কয়েক বছর পরে একটি করে হরিণ, ময়ূর এবং বাঁদরের মৃত্যু হয়। এর পরে রেল পার্কে থাকা প্রায় সব প্রাণীকেই বন দফতরের হাতে তুলে দেয়। আরপিএফের ক্যাম্পও তুলে নেওয়া হয়। |
শতাব্দী শিশু উদ্যানে আসা-যাওয়া কমেছে লোকজনের। —নিজস্ব চিত্র। |
এ দিকে পাহারা না থাকায় পার্কে বাড়ছে দুষ্কৃতী উপদ্রব। পার্কের কর্মীরা জানিয়েছেন, পার্কের পাঁচিলের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। সেখান দিয়ে ঢুকে পড়ছে দুষ্কৃতী। পুলিশ পার্কের কর্মীদের সাহায্যে বেশ কয়েক বার দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলেও সমস্যা মেটেনি। বর্তমানে পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার চণ্ডী সান্যাল জানান, ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর টেন্ডারের মাধ্যমে তিনি পার্কের দায়িত্ব পান। পার্ক উদ্বোধনের সময় থেকে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত পার্কের দায়িত্বে ছিল আরও এক ঠিকেদার। চণ্ডীবাবুর অভিযোগ, “পার্কটি উদ্বোধনের সময় ৪২টি খুঁটিতে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেখি সাতটি মাত্র খুঁটি অবশিষ্ট আছে। তার একটিতেও বালব্ নেই। সব চুরি করে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
চণ্ডীবাবু জানান, ২০১১ সালের মার্চ মাসে রেল পার্কে নতুন করে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়। একটি মিটারও লাগায়। কিন্তু ১৫ দিন পর কিছু না জানিয়ে মিটারটি খুলে নিয়ে নেয়। এর পর কোনও মিটার ছাড়াই বিল পাঠানো হয়। তিনি বিল জমা না দিয়ে লিখিত প্রতিবাদ করেন। রেল জানায়, মিটার তাদের ‘পাওয়ার হাউসে’ রাখা আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এই কথা মানতে চাননি। ওই বছরের নভেম্বরে পার্কের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এর পর তিনি নিজের উদ্যোগে ৩৫টি খুঁটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে জানিয়েছেন চণ্ডীবাবু। রেলের বকেয়া প্রায় ২ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।
রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মূ বলেন, “বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারকে আলোচনার জন্য ডেকেছি। কিন্তু উনি আসেননি।” যদিও ঠিকাদার আলোচনায় ডাকার কথা মানতে চাননি। সমস্যার কথা স্বীকার করে আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই রেলের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে রেল মন্ত্রকের কাছে দরবার করব।” |