বাঁধ বাঁধা হল না দু’দিন পরেও
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
দু’দিনের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনীর চেষ্টা সত্ত্বেও পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাই নদীর বাঁধ বাঁধার কাজ সম্পূর্ণ হল না। কাঁসাই নদীর জল স্তর কমলেও বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও জল ঢুকছে। ফলে তমলুক ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য মঙ্গলবার বলেন, “আশা করছি বুধবারের মধ্যে বাঁধ মেরামতির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তমলুক ব্লকের কয়েক’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওই সব এলাকায় ফের বেশ কিছু ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে।”
অতিবর্ষণ ও ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার জেরে গত ২৪ অগস্ট পাঁশকুড়া পুরসভার রানিহাটিতে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পাঁশকুড়া, তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকের ২০০টির বেশি গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছিল। |
পাঁশকুড়ায় চলছে বাঁধ মেরামতি। |
সেচ দফতর বাঁধ মেরামত করলেও গত ১৫ অক্টোবর ব্যারাজের ছাড়া জলে বাঁধের মেরামতির করা অংশ ফের ভেঙে যায়। পুরনো এলাকাগুলি ফের জলমগ্ন হয়। সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বাঁধ বাঁধা হয় এ বার। গত রবিবার সকালে ফের সেই বাঁধের একাংশ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করলে মানুষের ক্ষোভ চরমে ওঠে। সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে রবিবার দুপুর থেকেই বাঁধ বাঁধার কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত দু’দিন ধরে সেনাবাহিনী বাঁধ বাঁধার কাজ চালালেও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁসাইয়ের জলস্তর কমে কমে মঙ্গলবার দুপুরে দাঁড়ায় ৭.৬৪ মিটার। জলস্তর কমলেও রানিহাটির কাছে নদীবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে প্রবল গতিতে জল ঢুকতে থাকায় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল গতিতে জল ঢুকতে থাকায় ইট ভর্তি বস্তাও দূরে চলে যাচ্ছে। এর ফলে বাঁধ বাঁধার কাজ ঠিক মতো এগোচ্ছে না। গত দু’দিনে বাঁধের ভেঙে যাওয়া প্রায় ৩০ মিটার অংশের মধ্যে প্রায় ২০ মিটার বাঁধা হয়েছে। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিত বলেন, “প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বাঁধ বাঁধার কাজ হচ্ছে। আর ১০ মিটার মতো ভাঙা অংশ মেরামতির কাজ বাকি। বুধবারের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।” |
পুলিশ আটকাল কংগ্রেস নেতাদের কনভয়। |
পাঁশকুড়ার দিক থেকে জল আসার জেরে তমলুক ব্লকের অনন্তপুর ১, ২, শ্রীরামপুর ১, ২ ও পদুমপুর ১,২ পঞ্চায়েত এলাকার জলস্তর আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন বর্ধমান বিভাগের কমিশনার এইচ রামালু। জেলা প্রশাসনিক অফিসেও জরুরি বৈঠক হয়।
এ দিকে এই অবস্থায় মঙ্গলবার পাঁশকুড়া স্টেশনবাজারে একটি সভা করার কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস। পুলিশ ওই সভার অনুমতি দেয়নি বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেতৃত্বের। এ দিন বিকেলে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা শাকিল আহমেদ খান ও প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্রের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে যাচ্ছিলেন। পথে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কে চাঁপাডালি মোড়ের কাছে পুলিশ তাঁদের কনভয় আটকে দেয়। সেই সময় সেচ দফতরের সচিব তুষার ঘোষ-সহ আধিকারিকরা ভাঙনস্থলে যাচ্ছিলেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান। সেচ দফতরের সচিবের সঙ্গে কথাও হয় কংগ্রেস নেতৃত্বের। পরে পাঁশকুড়া স্টেশনবাজার সংলগ্ন একটি বেসরকারি অতিথিশালায় সভা করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। শাকিল আহমেদ খান বলেন, “একই জায়গায় বাঁধ তিন বার ভেঙে গিয়ে বন্যার কবলে পড়েছে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। এমনটা কেন হচ্ছে জানা দরকার। বাঁধ মেরামতের কাজও দ্রুত শেষ করতে হবে।” |
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
পুরনো খবর: জল নামেনি, রোদেই স্বস্তি |
|