|
|
|
|
পাঁশকুড়ায় বাঁধ সারাইয়ে ব্যস্ত সেনা, দাসপুরে শুরুই হয়নি কাজ |
জল নামেনি, রোদেই স্বস্তি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পাঁশকুড়ায় বাঁধ মেরামতির কাজ এখনও বাকি। ফলে কাঁসাইয়ের জলস্তর কমলেও ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে জল ঢুকছে। পাঁশকুড়া ও তমলুক ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় জমা জলের পরিমাণ বাড়ছে ক্রমশ। জল নামার লক্ষ্মণ নেই ঘাটালেও। কাঁথি-সহ বেশ কিছু এলাকায় অবশ্য জল নামছে। সর্বোপরি অনেক দিন পর রোদের দেখা মেলায় স্বস্তির আবহ দুই মেদিনীপুরেই।
তৃতীয় বার কাঁসাইয়ের বাঁধ ভাঙায় পাঁশকুড়া পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড-সহ প্রতাপপুর-২, রাধাবল্লভচক, পুরুষোত্তমপুর, তমলুক ব্লকের অনন্তপুর-১, ২ , শ্রীরামপুর ১, ২, পদুমপুর ১, ২ পঞ্চায়েত এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হয়েছে। জল কমে যাওয়ায় কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন পাঁশকুড়ার গুমাই এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস। রবিবার ফের তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের ধারে ত্রিপলের ছাউনি করে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “প্রথমবার বাঁধ ভেঙে আমার দু’বিঘে ধান চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গত দু’মাস ধরে এই রাস্তার ধারেই ছিলাম। জল কমছে দেখে গত মঙ্গলবার বাড়ি ফিরি। কিন্তু রবিবার ফের বাঁধ ভাঙায় ফের রাস্তায় উঠেছি। দু’মাস ধরে কাজ করতে না পারায় আয় বন্ধ। আত্মীয়দের কাছে ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে।” |
|
পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে জোরকদমে। |
নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে পাঁশকুড়ার সংলগ্ন তমলুক ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাও। জল বেড়েছে তমলুক ব্লকের পূর্বনখা, কিসমত, গোপীনাথপুর, কুরপাই, কালিকাপুর, মির্জাপুর প্রভৃতি গ্রামে। রাস্তার ধারে আশ্রয় নেওয়া পূর্বনখা গ্রামের বাসিন্দা ধীরেন সিংহ বলেন, “গত ২৫ অগস্ট বন্যার জলে ডুবে বাড়ি ভেঙেছে। ৬০ ডেসিমেল জমিতে পান বরজ ছিল। তা-ও ডুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” গ্রামের বাসিন্দা অশোক বর্মন বলেন, “আমার নিজস্ব এক বিঘে ও অন্যের ৫ বিঘে জমি লিজ নিয়ে ৬ বিঘেতে ভেড়ি করে মাছ চাষ করেছিলাম। আর এক মাস পরেই মাছ তোলা হত। কিন্তু তার আগেই বন্যার জলে ডুবে ভেড়ির সব মাছ ভেসে গিয়েছে। প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
পূর্বনখা গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বুদ্ধদেব ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে ৩৫০টি পরিবারের অধিকাংশ বাসিন্দাই ধান চাষ ছাড়াও আয়ের জন্য পান, মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। বন্যার জলে ডুবে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
এ দিন শ্রীরামপুর বাজার ও হিজলবেড়িয়া বাজারে ত্রাণ সামগ্রী বিলি করেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
কাঁথি মহকুমায় অবশ্য জল নামছে। তবে, কাঁথি-৩ ব্লকের কানাইদিঘি ও কুসুমপুর অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর নষ্ট হওয়া ছাড়াও কয়েক হেক্টর জমির ফসল ও সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। গত ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে কাঁথি মহকুমার ৮টি ব্লকই কমবেশি জলমগ্ন হওয়ায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কাঁথির মহকুমাশাসক সরিত্ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ৫ হাজার ত্রিপল-সহ ১৮ মেট্রিক টন চাল-গম পাঠানো হয়েছে। |
|
আশ্রয় প্রাথমিক স্কুলে। |
ঘাটাল মহকুমার প্রায় ১৪টি পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম এখনও জলমগ্ন। জলের স্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ জায়গায় সোমবার সকালেই বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পাম্প চালাতে না পারায় পানীয় জলেরও অভাব দেখা দিয়েছে। পুরসভার উপ-পুরপ্রধান উদয়শঙ্কর সিংহরায় বলেন, “এ বার জলের স্তর বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ পুরএলাকার বেশিরভাগ জায়গাতেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। আমরা জলের বিকল্প ব্যবস্থা করছি।”
এদিকে মাস ছ’য়েক আগে দাসপুর-১ ব্লকের ধর্মায় ভেঙে যাওয়া কংসাবতীর বাঁধ এখনও সংস্কার হয়নি। ফলে ভাঙা বাঁধ দিয়ে জল ঢুকছে। ধর্মা-সহ আশপাশের গ্রামে যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁরা এখনও কেউ নদী পাড়ে কেউ বা স্থানীয় স্কুলের ছাদেই দিন কাটাচ্ছেন। কংসাবতী নদীর উঁচু বাঁধে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটছে ধর্মার মহাদেব দোলই, বংশী দোলই, জলধর দোলইরা। জলধরবাবু বলেন, “দিনমজুরি খেটে সংসার চালাই। এই ক’মাস কী ভাবে যে সংসার চলছে-সে শুধু আমিই জানি।” একই ছবি বালিপোতাতেও। মাস খানেক আগেই বালিপোতায় বাঁধ ভেঙে ব্লকের নাড়াজোল ও রাজনগর পঞ্চায়েতের প্রায় ২৫-৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। ফের জল ঢুকেছে ওই জায়গা দিয়ে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অদীপ রায় বলেন, “পরপর বন্যার জেরে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বন্যা কমলেই কাজ হবে।”
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবশ্য উন্নতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। নতুন করে কোনও এলাকা জলমগ্ন হয়নি। সোমবার জেলার গড় বৃষ্টির পরিমাণও নামমাত্র, এক মিলিমিটারের নীচে। তবে, গোপীবল্লভপুরে চার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রবিবার যেখানে জেলায় সব মিলিয়ে ১৫টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল, সোমবার সেখানে ৫টি ত্রাণ শিবির চালু ছিল। এদিন কংসাবতী থেকে ১২ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, উদ্বেগের কিছু নেই। সমস্ত এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে। |
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
পুরনো খবর: জমা জলে নাভিশ্বাস দুই মেদিনীপুরেই |
|
|
|
|
|