কর্মীর অভাবে ধুঁকছে বহু গ্রামীণ গ্রন্থাগার
র্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য। ফলে, কর্মীর অভাবে ধুঁকছে দুই মেদিনীপুরের বহু গ্রামীণ গ্রন্থাগার। শহর এবং জেলা গ্রন্থাগারগুলিও তেমন কিছু ভাল অবস্থায় নেই। তবে, গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলোর তুলনায় মন্দের ভাল।
অথচ, শুরুতে গ্রামীণ গ্রন্থাগার ঘিরে স্থানীয় গ্রামবাসীদের উত্‌সাহের অন্ত ছিল না। আশাপাশের গ্রামের মানুষও পথ উজিয়ে আসতেন। বই পড়তেন। দিন বদলের সঙ্গে ছবিটা বদলেছে। এখন আর ততটা উত্‌সাহ নেই। গ্রন্থাগারগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। কোথাও পুরনো ভবন। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। বইপত্র ভেজে। জলে ভিজে অনেক বই নষ্টও হয়। কোথাও আবার দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পাঠাগারের মধ্যে তৈরি হয়েছে উইয়ের ঢিবি। হাতে গোনা কিছু আলমারি থাকলেও বহু বই পড়ে বাইরে। তার উপর ধুলো জমছে। পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় দেখার কেউ নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে যে ১৫৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে, তার মধ্যে গ্রামীণ গ্রন্থাগার ১৪২টি, শহরের গ্রন্থাগার ১৫টি এবং জেলা গ্রন্থাগার একটি। পূর্ব মেদিনীপুরে যে ১২১টি গ্রন্থাগার রয়েছে, তার মধ্যে গ্রামীণ গ্রন্থাগার ১১০টি, শহরের গ্রন্থাগার ১০টি এবং জেলা গ্রন্থাগার একটি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫৮টি গ্রন্থাগারে ৩৫৪টি পদের মধ্যে ১৬৯টি পদই শূন্য। পূর্ব মেদিনীপুরে ১২১টি গ্রন্থাগারের ২৬৯টি পদের মধ্যে ১০৭টি শূন্য। এতগুলো পদ শূন্য থাকায় গ্রন্থাগারগুলোতে নানা সমস্যা তৈরি হয়। কর্মীদের সঙ্গে পাঠকেদেরও ভোগান্তি হয়।
পশ্চিমে গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলোর জন্য অনুমোদিত পদ ২৮৪টি। এর মধ্যে ১২৩টি পদই শূন্য। এই ২৮৪টি পদের মধ্যে ১৪২টি পদ গ্রন্থাগারিকের। রয়েছেন ৬৭ জন। পশ্চিমের পুরনো গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে খড়্গপুর-২ ব্লকের মাদপুরের মৃণালিনী মৈত্রী সঙ্ঘ গ্রামীণ পাঠাগার অন্যতম। ১৯৬২ সালে গড়ে ওঠে এই গ্রামীণ গ্রন্থাগার। সব মিলিয়ে কর্মী রয়েছেন দু’জন। গ্রন্থাগারের সম্পাদক বাণীকুমার সামন্ত বলেন, “পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। কর্মীর সংখ্যার কম। আরও কিছু বই দরকার, আলমারি দরকার। সমস্যার কথা সব স্তরে জানিয়েছি। আশা করি, রাজ্য সরকার গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলোর হাল ফেরাতে উদ্যোগী হবে। সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।”
এমন পরিস্থিতির জন্য বর্তমান রাজ্য সরকারকেই দুষছেন বিরোধীরা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বিরোধী দলনেতা নিরঞ্জন সিহি বলেন, “গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলোয় পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। অবিলম্বে শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা জরুরি। রাজ্য সরকার তো কর্মী নিয়োগের কথাই ভাবছে না।” জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে এই পরিস্থিতি হত না। গ্রন্থাগারগুলো চালু রাখতে গেলে ন্যূনতম পরিকাঠামো দরকার। কর্মী কম থাকলে সমস্যা হবেই।”
শাসক দল অবশ্য এই পরিস্থিতি জন্য ঘুরে বাম-আমলকেই দুষছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের দলনেতা অজিত মাইতির কথায়, “বাম-আমলেই গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলো ধুঁকতে শুরু করে। পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। গ্রন্থাগারগুলোর হাল ফেরাতে রাজ্য সরকার সব রকম চেষ্টা করছে।” জেলার গ্রন্থাগার সংক্রান্ত কমিটির সদস্য অজিতবাবু বলেন, “পুজোর পর গ্রন্থাগারগুলোয় পরিদর্শন শুরু হবে। ইতিমধ্যে কিছু প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিভাগীয় মন্ত্রীর কাছে যাব। শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের বিষয়টিও জানাব।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “রাজ্য সরকার গ্রন্থাগারগুলোর হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপও হয়েছে।”
এ দিকে, পূর্বে জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিকের পদটিই এখন শূন্য রয়েছে। পশ্চিমের জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিত্‌ পান পূর্বের কাজকর্ম দেখভাল করেন। তিনিই পূর্বের ভারপ্রাপ্ত জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক। দুই জেলাতেই জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিকের দফতরের নিজস্ব ভবন নেই। পূর্বে জেলা গ্রন্থাগার ক্যাম্পাসেই গ্রন্থাগার আধিকারিকের দফতর চলে। পশ্চিমে জেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে গ্রন্থাগার আধিকারিকের দফতর চলে ভাড়া ঘরে। এই অবস্থায় গ্রামীণ গ্রন্থাগারের উন্নয়নে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে দুই মেদিনীপুরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.