সুপার লিগের সংগঠক আইএমজিআর বনাম ক্লাব জোটের লড়াই আরও তীব্র হল।
মঙ্গলবার কলকাতায় ক্লাব জোটের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সুব্রত পাল, গৌরমাঙ্গি সিংহ, নির্মল ছেত্রী, সঞ্জু প্রধানদের ক্লাবের জার্সি গায়ে টুর্নামেন্টে খেলতে হলে আইঅমজিআরের চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসতেই হবে। না হলে সামনের বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তাদের বসে থাকতে হবে।
ফলে অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সামনে সুপার লিগে চুক্তিবদ্ধ দেশের প্রায় চল্লিশ জন ফুটবলার। তাদের এখন ঠিক করতে হবে, সুপার লিগের লাখ লাখ টাকা মাইনে নিয়ে তারা বসে থাকবেন, না সেই লোভ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক্লাবে খেলে নিজের ফুটবলার জীবন বাঁচাবেন।
জোট চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের নিয়ে কড়া মনোভাব নিলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া পৈলান অ্যারোজের প্রতিশ্রুতিমান ২৪ ফুটবলারের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। অ্যারোজের ফুটবলারদের ক্লাবেরা নিতে পারবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিনের সভায়। ইতিমধ্যেই মোহনবাগান এবং ডেম্পো তিন জন অ্যারোজের ফুটবলার নিয়েছে। অন্যরাও নেওয়ার পথে। জোটের এই সিদ্ধান্তে ফেডারেশন কর্তারা খুশি। এক কর্তা বললেন, “ওটা ফেডারেশনের টিম ছিল। ফলে, ওদের খেলানোর ব্যাপারে আমাদের দায়বদ্ধতা ছিল।”
মহমেডান জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তাদের কার্যত শো-কজ করা হয়েছে সভায়। কেন জোটের শর্ত ভেঙে তারা রহিম নবি, মণীশ মৈথানিদের নিল তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হল। এ দিনের সভায় আই লিগের ১৩ ক্লাবের মধ্যে ১১ ক্লাবই উপস্থিত ছিল। মহমেডান ও মোহনবাগান কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি। মোহনবাগানের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানান হয়, সচিব অঞ্জন মিত্র অসুস্থ থাকায় তারা আসতে পারেনি। তবে জোট যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মানবেন তাঁরা।
মহমেডান অবশ্য এ দিনই জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা জোট ছেড়ে দিচ্ছে। ক্লাব প্রেসিডেন্ট সুলতান আমেদ বললেন, “আমরা জোট ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি সভায় গিয়ে এটাই বলে আসতেন। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত কাজে আটকে যাওয়ায় যেতে পারেননি।” কিন্তু কেন মহমেডান জোট ছাড়ল? প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ সুলতান বললেন, “ভিন রাজ্যের দলগুলি আমাদের বিপথে চালিত করছে। ওরা নিজেরা ভাল টিম করে নিয়ে এখন সুপার কাপের নিলামের জন্য তৈরি হচ্ছে।”
জোটের পক্ষে প্রেসিডেন্ট সালগাওকরের রাজ গোমস এ দিন বলেন, “কোনও ক্লাব যদি আইএমজি লিগের জন্য ফুটবলার ছাড়ে তা হলে তাদের জোটের অনুমোদন নিতে হবে।” জানা গিয়েছে, প্রধানত ইউনাইটেড স্পোর্টসের জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কারণ, স্পনসরবিহীন ইউনাইটেডের আট ফুটবলারের কাছে চুক্তিপত্র পাঠিয়েছেন সুপার লিগের কর্তারা। ওই ফুটবলাররা নতুন লিগে চুক্তিবদ্ধ হলে ইউনাইটেড প্রচুর টাকা পাবে। তাতে তাদের দল চালাতে সুবিধা হবে। এ দিনের সভায় এ এফ সি কাপে সাফল্য ও ভাল সংগঠনের জন্য ইস্টবেঙ্গলকে জোটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান হয়।
এ বছর ফেড কাপ না হওয়ায় সভায় বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্ষোভ জানান হয়। আইপিএফসি-র প্রেসিডেন্ট রাজ গোমস বলেন, “৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই টুর্নামেন্ট না হওয়ায় এ এফ সি কাপে ক্লাবগুলি খেলার সুযোগ পাচ্ছে না।” তা মানতে অবশ্য রাজি নন আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর। বললেন, “ফেড কাপ যখন হোম-অ্যাওয়ে হওয়ার কথা হয়েছিল তখনই ঠিক হয়েছিল এ বার আই লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সরা এ এফ সি-তে খেলবে। ক্লাবগুলি সেটা জানে।”
সুপার লিগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আই লিগ এগিয়ে আসছে। সূচিও বদল হচ্ছে। আজ কলকাতায় আই লিগের নতুন সূচি নিয়ে সুনন্দবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ক্লাবের প্রতিনিধিরা। সুনন্দ বললেন, “আমরা এপ্রিলের মধ্যেই আই লিগ শেষ করব। কারণ, মে মাসে লোকসভা নির্বাচন হতে পারে। তবে লিগের মাঝে আই এফ এ শিল্ডের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে।” |