|
|
|
|
লোক-লস্কর-খরচাই সার, উন্নাওয়ে সোনা অধরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
স্বপ্নে দেখা সোনা স্বপ্নেই থাক। ডৌড়িয়া খেড়ার ধ্বংসস্তূপের তলায় যেখানে এত দিন খোঁড়াখুড়ি চলছিল, আপাতত সেখানে সোনার দেখা মিলল না। ওই এলাকায় খনন কাজ আগামিকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হলেও অন্য প্রান্তে অবশ্য আরও কিছু দিন চলবে এই খোঁড়াখুঁড়ি।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গত ১৮ অক্টোবর উন্নাওয়ে খনন কাজ শুরু করেছিল পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)। এগারো দিন ধরে পৌনে পাঁচ মিটার মাটি খুঁড়ে কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পেলেও দেখা মিলল না সোনার। এএসআইয়ের ডিজি প্রবীণ শ্রীবাস্তব আজ এক প্রকার মেনেই নিলেন, সাধু শোভন সরকারের স্বপ্নে দেখা সোনা ওখানে নেই। তা বলে খনন কাজ এখনই বন্ধ হচ্ছে না। সোনার সংশয় কাটাতে আগামিকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করতে চলেছে এএসআই। আরও এক সপ্তাহ চলবে সেই কাজ।
উন্নাও নিয়ে হইচইয়ের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। সাধু শোভন সরকার নামে এক সাধুবাবা হঠাৎই দাবি করে বসেন, ডৌড়িয়া খেড়াতে রাজা রামরাও বক্স নামে এক প্রাক্তন রাজার কেল্লার ধংসস্তূপের নীচে পোঁতা রয়েছে বিপুল পরিমাণ সোনা। এক-আধ টন নয়, হাজার টন। খোদ রাজা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে ওই সোনা দেশের কাজে লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন। শিষ্য তথা কেন্দ্রীয় কৃষি ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ প্রতিমন্ত্রী চরণদাস মোহান্তকে এই কথা জানান ওই সাধু। মূলত মন্ত্রীর উদ্যোগেই প্রথমে জিএসআই ওই এলাকায় মাটির নীচে কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখে।
সেই রিপোর্টের উল্লেখ করে শ্রীবাস্তব বলেন, “জিএসআই মাটির প্রায় ৫ থেকে ২০ মিটার নিচে ধাতুর উপস্থিতির কথা বলেছিল। প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক স্থলে কী রয়েছে, তা দেখতেই খনন শুরু করে এএসআই।” পৌনে পাঁচ মিটার খোঁড়ার পর মাটির নীচে দেওয়াল ছাড়াও, পোড়ামাটির জিনিস, কাচের চুড়ি, পেরেক, পাথরের সিংহ হরেক রকম জিনিস পেয়েছে এএসআই। প্রথম দিনই এএসআই দাবি করেছিল সোনা নয়, প্রত্নস্থলটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকাতেই সেটির খননে হাত দিয়েছে তারা। আজও ঠিক একই সুরে শ্রীবাস্তব বলেন, “জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই) ওই স্থানে ধাতুর উপস্থিতির কথা বলেছে। কোনও রকম সন্দেহের অবকাশ যাতে না থাকে, তাই ওই স্থানের অন্য একটি প্রান্তে দ্বিতীয় পর্বের খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু সোনা?
এএসআই আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে, প্রথম যে স্থানে খনন করা হয়েছে সেখানে সোনার চিহ্নমাত্র নেই। এএসআইয়ের অতিরিক্ত ডিজি বি আর মণি বলেন, আগামিকাল থেকে প্রথম স্থানটির খননের কাজ সরকারি ভাবে বন্ধ করে দ্বিতীয় স্থানের খনন শুরু হবে। আর সাত থেকে দশ দিন পরই পুরো ছবিটা সামনে চলে আসবে।”
কিন্তু এত লোক-লস্কর খরচ করে, এত দিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে লাভটা কী হল?
এএসআইয়ের দাবি, এর আগে ওই স্থানটি থেকে যে নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল তা সপ্তম শতকের। বর্তমান খননে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে কিছু খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের। উন্নাওয়ের ইতিহাস যে আরও আটশো বছরের পুরনো, তা এই খননের ফলেই জানা গেল।
উন্নাওয়ে সোনা খোঁজা নিয়ে রাজনীতিও হয়েছে বিস্তর। ব্যঙ্গের সুরে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “কেউ স্বপ্ন দেখল আর সোনার খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করল কেন্দ্র। বিদেশে থাকা কালো টাকার পরিমাণ ওই সোনার চেয়ে বেশি।” পরে অবশ্য এই মন্তব্যের জন্য সাধু শোভনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
কিন্তু যা নিয়ে এত তোলপাড়, সেই সোনা এখনও অধরাই।
|
পুরনো খবর: ঠিক মিলবে সোনা, অটল বিশ্বাস স্থানীয়দের |
|
|
|
|
|