নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সুদ বাড়ানোই যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে প্রধান অস্ত্র, তা ফের প্রমাণ করলেন নতুন গভর্নর রঘুরাম রাজন। দায়িত্বে এসে তাই ঋণনীতির পর পর দুটি পর্যালোচনায় সেই পথেই হাঁটলেন তিনি।
মঙ্গলবার রেপো রেট বাড়ানো হল ২৫ বেসিস পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে তা বাড়ে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। অবশ্য রাজন বলেছেন, “কেউ যেন ধরে না-নেন, সুদ বাড়তেই থাকবে। এই ব্যবস্থা কতটা ফল দেয়, তা জানিয়ে দেবে পরিসখ্যানই। তা দেখে তবেই নেওয়া হবে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত।”
এ বারও বাঙ্কের হাতে বাড়তি নগদ জোগাতে দ্বিমুখী ব্যবস্থা নিয়েছেন রাজন। প্রথমত, মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি (এমএসএফ)-র হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছেন। এই হারে জরুরি প্রয়োজনে ব্যাঙ্কগুলি স্বল্প মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেয়। তা কমায় ব্যাঙ্কের তহবিল সংগ্রহের খরচ কমবে। দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্কগুলি রেপো ব্যবস্থায় যাতে আরও বেশি ঋণ পেতে পারে, সে-পথ চওড়া করতে আমানতের ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ঋণ পাওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। আগে আমানতের ০.২৫% ঋণ নিতে পারত তারা। এখন পারবে ০.৫০%।
রাজনকে প্রভাবিত করেছে, খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ৯ শতাংশেই থাকার সম্ভাবনা। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও ঊর্ধ্বমুখী। আর্থিক বৃদ্ধি ২০১৩-’১৪-এ ৫ শতাংশের বেশি হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। |
একনজরে |
• রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৭.৭৫%
• রিভার্স রেপো রেট একই হারে বেড়ে ৬.৭৫%
• মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি বা আপৎকালীন
ঋণে সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৮.৭৫%
• রেপো রেটে ব্যাঙ্ক আমানতের ভিত্তিতে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ
• জাতীয় আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০১৩-’১৪ সালে ৫%
• খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি থাকবে ৯ শতাংশের কাছাকাছিই |
|
শিল্পমহল অবশ্য রেপো রেট বাড়ায় বিশেষ ভাবে অখুশি। (ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-হারে সুদ নেয়, তাই রেপো রেট।) এমসিসি চেম্বারের সভাপতি সঞ্জয় অগ্রবাল বলেন, “গত দু’বছর ধরেই কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তাতে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পারাতে ব্যর্থ তারা।” ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ ও ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত অবশ্য বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদি এবং স্বল্প মেয়াদি সুদের মধ্যে ১ শতাংশ ফারাক রাখা জরুরি। রেপো রেট বাড়িয়ে ও এমএসএফের হার কমিয়ে সেটাই করেছেন রাজন। এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে রেপো রেট বাড়িয়েছেন। অন্য দিকে ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন।”
শিল্প বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কিন্তু দত্ত বা ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন মনে করেন না, এটা একা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সম্ভব। ভাস্করবাবু বলেন, “আরবিআইয়ের পক্ষে একসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি বাগে আনা, সুদ কমানো ও টাকার দাম ধরে রাখা সম্ভব নয়। কেন্দ্রকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে পণ্যের জোগান বাড়াতে তৎপর হতে হবে কেন্দ্রকেই।”
একই সুরে বি কে দত্ত বলেন, “পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের বহু টাকার ঋণ অনাদায়ী। শিল্পঋণ বাড়াতে হলে আটকে থাকা ওই টাকা আদায়ে বিশেষ ‘ইনসেনটিভ স্কিম’-এর ব্যবস্থা করা জরুরি। এটা কেন্দ্রীয় সরকারই করতে পারে।”
|