শিল্প-জমি কিনতে কেন্দ্রের
কাছে অর্থ চায় রাজ্য

ড় শিল্প গড়তে একলপ্তে বেশি জমি দরকার। অথচ তেমন জমি খরিদ বা অধিগ্রহণের মতো যথেষ্ট টাকার জোর রাজ্যের নেই। এই কারণে ‘বিশেষ আর্থিক সাহায্য’ চেয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর: চলতি বছরের শেষে পটনায় পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির শিল্পমন্ত্রীদের যে সম্মেলন হতে চলেছে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে দাবিটি তুলবেন। তার আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের এই দাবি কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকে লিখিত ভাবে পেশ করেছেন রাজ্যের শিল্প-সচিব চঞ্চলমল বাচোয়াত।
২০১১-র মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রের কাছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ চেয়েছিল। দিল্লি তা মঞ্জুর করেনি। পরে দু’লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ ও তার সুদ পরিশোধের উপরে দিল্লির কাছে তিন বছরের ‘স্থগিতাদেশ’ (মোরাটোরিয়াম) চাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক তাতেও সায় দেয়নি। যদিও অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে জঙ্গলমহলের তিন জেলার জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য মিলেছে।
তার পরে এ বার ভারী শিল্পের জমি জোগাড় ও পরিকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ আর্থিক সহায়তার আর্জি। তবে এই ‘বিশেষ সহায়তা’ অনুদান হিসেবে মিলতে পারে, নাকি ঋণ হিসেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বস্তুত রাজ্যের প্রস্তাবেও এ সম্পর্কে খোলসা করে কিছু বলা হয়নি। শিল্প দফতরের এক কর্তার কথায়, “পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর শিল্পমন্ত্রীদের নিয়ে সম্মেলন হবে এই প্রথম। সেখানে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী দাবিটি তুলবেন, তার পরে দিল্লির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তাই আমরাও ব্যাপারটা উহ্য রেখেছি।” শিল্পমন্ত্রী কী বলছেন?
পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, “রাজ্যে আরও চারটে শিল্পবিকাশ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল, উত্তরবঙ্গ ও দুই ২৪ পরগনায়। তবে সরকারের নীতি হল, কোথাও জবরদস্তি জমি নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র ইচ্ছুক মালিকদের থেকে, বাজারদরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি নেওয়া হবে। এতে বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন। তাই কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে।” এবং রাজ্য সরকার যে অনুদান হিসেবেই তা হাতে পাওয়ার আশা করছে, শিল্পমন্ত্রী সেটাও জানিয়ে রেখেছেন।
ঘটনা হল, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা ১৫টি শিল্পতালুকে প্রায় তিন হাজার একর জমি অব্যবহৃত। বার বার বিজ্ঞাপন দিয়েও সেখানে শিল্প গড়তে আগ্রহী লগ্নিকারীর খোঁজ মেলেনি। এই অবস্থায় নতুন চার-চারটি শিল্পবিকাশ কেন্দ্র তৈরির ভাবনা কি বাস্তবোচিত?
শিল্প-বাণিজ্যমহলে প্রশ্নটা ইতিমধ্যে মাথা চাড়া দিয়েছে। যার জবাবে সরকারি কর্তাদের যুক্তি, “এখনকার শিল্পতালুকে এক লপ্তে বেশি জমি পাওয়া মুশকিল। তাই বড়মাপের উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এরই প্রেক্ষিতে নতুন শিল্পকেন্দ্র করার কথা ভাবা হয়েছে, যাতে জমি-সমস্যার সুরাহা করা যায়।’’
যুক্তি শুনে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে এত দিন ধরে শিল্প গড়ার জন্য যে ‘জমি ব্যাঙ্কের’ (ল্যান্ড ব্যাঙ্ক) কথা বারবার বলা হচ্ছিল, তার কী হল? বড় হোক বা ছোট, শিল্পের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জমির হদিস ল্যান্ড ব্যাঙ্কে মিলবে, এমনই তো কথা ছিল!
এর সদুত্তর সরকারের তরফে মেলেনি।
তবে শিল্প-কর্তাদের একাংশের দাবি: এক লপ্তে বড় জমি ছাড়া যে শিল্পায়ন অসম্ভব, রাজ্য সরকার অবশেষে তা স্বীকার করছে। তাই ওই ধরনের জমির চাহিদা মেটানোর তাগিদ। প্রশাসন-সূত্রের খবর, শিল্পের জমি অধিগ্রহণ করে তার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজটি শিল্প দফতরের হয়ে করে থাকে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম বা পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে টাকা ঢালতে হয় তাদেরই। পরে সেই জমি বেসরকারি সংস্থাকে বেচে কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ‘লিজ’ দিয়ে খরচ তোলা হয়। কিন্তু টানাটানির সংসারে প্রাথমিক টাকাটাই জোগাড় করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের বিশেষ আর্থিক সাহায্য মিললে, বিশেষত তা ‘অনুদান’ হিসেবে পাওয়া গেলে সঙ্কট অনেকটা কাটানো যাবে বলে প্রশাসনের কর্তারা আশাবাদী।
সরকারি সূত্রের খবর: মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে আন্তঃরাজ্য পরিষদের ‘আঞ্চলিক’ সম্মেলন প্রতি বছর হয়। এ বছর পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকটি বসেছিল কলকাতায়। সেখানে স্থির হয়, বছরের শেষাশেষি পশ্চিমবঙ্গ-বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার শিল্পমন্ত্রীরা পটনায় সম্মেলন করবেন। তারই সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া জানতে চায়। যার ভিত্তিতে দিল্লিকে দাবি-সনদ পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সচিব। মোট ছ’দফা দাবির প্রথমেই রয়েছে শিল্প-জমি জোগাড়ের স্বার্থে আর্থিক সহায়তার প্রসঙ্গটি। সচিবের বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি ভারী শিল্পতালুক ও তার আশপাশের পরিকাঠামো তৈরি করতে জমি দরকার। তার সংস্থান করতে জমিদাতাদের উপযুক্ত দাম দিতে হবে। এতে মোটা টাকা লাগবে। তাই বিশেষ আর্থিক সাহায্য পাওয়া জরুরি।
আর কী চেয়েছে রাজ্য?
শিল্প-সচিবের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপনে সরকার উদ্যোগী হচ্ছে। উদ্যোগ সফল করতে উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় লগ্নিকারীদের জন্য ‘বিশেষ অনুদান’ ঘোষণা করুক কেন্দ্র। এতে উত্তরবঙ্গে বিনিয়োগের আকর্ষণ বাড়বে। একই সঙ্গে রাজ্য চাইছে, প্রস্তাবিত অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডরকে আরও সম্প্রসারিত করে ফলতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে সাগরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সুবিধা হবে বলে সরকার মনে করছে। কারখানা গড়তে আগ্রহী সংস্থাগুলিকে আকরিক লোহা ও কয়লার জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করার কথাও দিল্লিকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লির কাছে পশ্চিমবঙ্গের দাবি: কয়লার মতো আকরিক লোহা বিলি-বণ্টনের জন্যও জাতীয় নীতি তৈরি হোক। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণ দেখিয়ে রাজ্যের যে সব প্রকল্প মন্ত্রকে আটকে রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত ছাড়পত্র মঞ্জুর করতেও দিল্লিকে বার্তা দিয়েছে রাজ্য।
আগে তো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দাবি দিল্লি ফিরিয়ে নিয়েছে। এ বারও যদি তারা রাজি না হয়?
শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবুর দাবি, “কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির পরিমাণ ভাল। তাই রাজ্যকে কেন্দ্রের তরফে সাহায্য করাই উচিত।” একই সঙ্গে পার্থবাবু বলেছেন, “এমন ভাবার কারণ নেই যে, কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করছি। বরং মুম্বই শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান শুনে অনেক লগ্নিকারী আস্থা রেখেছেন। সাড়াও দিয়েছেন।”
দাবির ছ’দফা
• ভারী শিল্পের স্বার্থে বিশেষ আর্থিক সাহায্য
• উত্তরবঙ্গে লগ্নিকারীদের বিশেষ অনুদান
• অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডর ফলতা পর্যন্ত
• শিল্পে আকরিক লোহা, কয়লার বাড়তি জোগান
• আকরিক লোহা বণ্টনেও জাতীয় নীতি
• দূষণ-যুক্তিতে রুদ্ধ বিভিন্ন প্রকল্পে দ্রুত ছাড়পত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.