নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
যিনি শাসন করেন, তিনি ছবিও আঁকেন! এমনকী, নিজের আগ্রহে এ বার তিনি শাড়ির পাড়ের নকশাও আঁকতে চান। ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ‘তন্তুজ’-র শাড়িতে ভেষজ রং ব্যবহারের জন্য সওয়াল করতে এ বার তিনি নিজেই তাঁতশিল্পীদের নিয়ে বসবেন।
মঙ্গলবার নবান্নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তিনি শাড়ির পাড়ের নকশা তৈরি করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁত শিল্পীদের পাঠাতেও বলেছেন।” স্বপনবাবু জানান, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে সেখানকার শিল্পীদের কাজ এবং শাড়িতে ভেষজ রঙের ব্যবহার দেখে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রং-তুলির প্রতি টান মুখ্যমন্ত্রীর এক বিশেষ দুর্বলতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ঢের আগেই কাজের ফাঁকে ছবি এঁকে ফেলা তাঁর প্রিয় নেশা। সে-সব ছবি নিয়ে সমাজসেবামূলক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রদর্শনী হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি একদা নিলাম হয়েছে নিউ ইয়র্কের ভারতীয়দের মধ্যেও। মমতা নিজেও বলেন, কাজের চাপের মধ্যে টেনশন কাটিয়ে ফুরফুরে হতেই বার-বার রং-তুলিতে আশ্রয় নেন তিনি।
বিরোধীরা কখনও কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আঁকাআঁকির চর্চা জারি রাখতে বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি কার্যকর করার সময়েও দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ‘বিশ্ব বাংলা’, ‘কন্যাশ্রী’ বা ‘যুবশ্রী’-র মতো প্রকল্পের প্রতীক এঁকেছেন। কলকাতা পুলিশ প্রকাশিত পুজো পরিক্রমার যে ম্যাপ তৈরি হয় তার প্রচ্ছদও গত তিন বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী এঁকে দিচ্ছেন। এর আগেও দেখা গিয়েছে, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দুরন্ত এক্সপ্রেসের কামরায় গায়ে কী রং হবে, তা মুখ্যমন্ত্রীই ঠিক করেছেন।
তা হলে ‘তন্তুজ’-র শাড়ির গায়ে নকশা ফুটিয়ে তোলা কি শিল্পী মমতার কৃতিত্বের তালিকায় নয়া সংযোজন? তা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁতশিল্পীরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পরামর্শ পেয়ে শাড়ির নকশায় হাত দেবেন--- এর প্রভাব সূদূরপ্রসারী ও ইতিবাচক বলে মনে করছেন চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। কেন?
যোগেনবাবুর মতে, প্রথম হচ্ছে ভেষজ রং ব্যবহারের দিকটা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে বিষয়টিতে আগ্রহী হলে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবন্ধু ভেষজ রঙের প্রসার আরও বাড়বে। শিল্পী মমতার কাজের সঙ্গেও পরিচিত যোগেনবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন তিনি। মাটি-উৎসবে যোগেনবাবু ও শুভাপ্রসন্নের পাশে মঞ্চে দাঁড়িয়েই মমতা ছবি এঁকেছিলেন। শাড়ির পাড়ে নকশার বিষয়ে মমতার আগ্রহের দিকটিকে যোগেনবাবু স্বাগতই জানাচ্ছেন। তবে তাঁর কথায়, “টেক্সটাইল পেন্টিংয়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, শাড়ির নকশা করার কাজ অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী হয়তো দু-একটি শাড়ির নকশায় হাত দিতে পারেন। কিন্তু পুরোটা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হবে না। সাধারণ ভাবে শাড়ির নকশা নিয়ে অবশ্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর ভাবনার আদান-প্রদান হতেই পারে।”
ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক ঘোষও মনে করেন, “রাজনীতিবিদেরা তো মানুষের মন বুঝে চলেন। এই গুণটার সঙ্গে শৈল্পিক দক্ষতা যোগ হলে তা সবার ভাল লাগবে।” |