ব্যাপক হিংসা, প্রাণহানি ও নাশকতার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শেষ হল জামাতে ইসলামির সমর্থনে বিএনপির লাগাতার ৬০ ঘণ্টার হরতাল। আজকের ৪ জন নিয়ে তিন দিনে মোট ২০ জন মারা গিয়েছেন, আহত হয়েছেন প্রায় দেড়শো মানুষ। বেশ কিছু জায়গায় রেল লাইন ওপড়ানো ছাড়া দুটি ট্রেন আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করেছে হরতাল সমর্থকরা। ভাঙচুরের পরে আগুন লাগানো হয়েছে বহু বাস ও মোটরগাড়িতে। শাসকদল আওয়ামি লিগের বেশ কয়োকটি অফিসও ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এই হরতালে সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে বিচারপতি, আইনজীবী ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণের নিশানা হিসেবে বেছে নেওয়াটা। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামাতের নেতাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়া বেশ কয়েক জনের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে।
হরতাল শুরুর আগের দিন শনিবার থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের দফতরের সামনে বোমাবাজি শুরু করেছিল বিএনপি ও জামাতের কর্মীরা। রবিবার থেকে হামলার নিশানা করা হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলিকে। কর্তব্যরত বহু সাংবাদিক বোমার টুকরো বা লাঠি-রডের ঘায়ে আহত হয়েছেন। যে সব বিচারপতি ও আইনজীবী একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। আতঙ্ক ছড়াতে বোমা ছোড়া হয়েছে তাঁদের বাড়িতে। বাদ পড়েনি মন্ত্রীদের বাড়িও। বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের এই দুই স্তম্ভের ওপরে হামলার ঘটনা জনমনে আগের বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে জঙ্গিদের উপদ্রবের স্মৃতিই ফের জাগিয়ে তুলেছে। বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের বদনাম করার জন্য সরকারের এজেন্টরা এই সব হামলা চালিয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা এই দাবি মানতে পারছেন না। আহত সাংবাদিকরা বলছেন, বিএনপি নেতৃত্ব এ ভাবে আড়াল করায় দুবৃত্তরাই উৎসাহিত হচ্ছেন।
নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনার দাবিতে এই হরতাল ডাকা হলেও, সোমবার আলোচনায় বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব খারিজ করে দেয় বিএনপি। শেখ হাসিনার দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিএনপি নেতৃত্ব চাইলেই আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। কিন্তু তাঁরা হরতালেই ব্যস্ত। বিএনপি অবশ্য আলোচনায় না-বসার দায় সরকারের ওপরেই চাপাচ্ছে। বিএনপির মুখপাত্রের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব আন্তরিক নয়, দুরভিসন্ধিমূলক।
এই পরিস্থিতিতে গত কাল শরিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকে অসাম্প্রদায়িক জোট মজবুত করার ওপরেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিনই তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থন পেতে তাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্য অসাম্প্রদায়িক দলগুলির সঙ্গেও শীঘ্রই আলোচনায় বলছেন শেখ হাসিনা।
|