বাংলাদেশের বন্ধে সুনসান পেট্রাপোল সীমান্ত
চিকিত্‌সার জন্য এ পারে এলেও
পরিবার নিয়ে আতঙ্কে মহসিন-ওলিয়ার
বাংলাদেশের ঝিকরগাছার বাসিন্দা মহম্মদ ওলিয়ার রহমান। মঙ্গলবার সকালে তাঁর সাত বছরের মেয়ে নিশিক নিয়ে বেনাপোল পেরিয়ে এ পারে পেট্রাপোলে পৌঁছে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। পাশাপাশি পরিবারের লোকজনের জন্যও চিন্তায় রয়েছেন। বর্তমানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তাল বাংলাদেশ। তাই এই মুহূর্তে পরিবার ছেড়ে এ দেশে আসতে মন চাইছিল না তাঁর। কিন্তু থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছে মেয়ে। কলকাতার একটি বেসরকারি তার চিকিত্‌সার জন্য বহু চেষ্টার পরে চিকিত্‌সকের ‘ডেট’ পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণে বাধ্য হয়েই মেয়েকে নিয়ে এ পারে আসা। যানবাহন বিশেষ চলছে না। পথে লোকজনের সংখ্যাও কম। বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বেনাপোলে এসে পৌঁছন তিনি। বললেন, “বাড়ির কাছেই পুলের হাট লোকায় বন্‌ধ সমর্থকেরা দোকানে দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সোমবার যশোহর গিয়েছিলাম ওষুধ কিনতে। সেখানে ওষুধের দোকান ছাড়া কোনও দোকান খোলা ছিল না।”
যাত্রীশূন্য পেট্রাপোল সীমান্ত। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)-র নেতৃত্বাধীন ১৮টি দল গত রবিবার থেকে ৬০ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক গিয়েছে। বন্ধ ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। টানা বন্‌ধে বিপর্যস্ত জনজীবন। নানা কাজে যাঁদের এ দেশে আসার কথা ছিল, তাঁদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আসতে সাহস করছেন না। একমাত্র চিকিত্‌সার প্রয়োজন ছাড়া খুব কমই লোক এ পারে আসছেন। যেমন মঙ্গলবারই এসেছেন বছর চৌষট্টির আলিস সাহেব আলি। বাড়ি বেনাপোলে। তাঁর ভাই মোটর সাইকেলে করে তাঁকে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। এ দিন পেট্রাপোলে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আলিস সাহেব বলেন, “বনগাঁয় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। সারা শরীরে জ্বালা করছে। বাধ্য হয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।”
পেট্রাপোল শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, দিনে গনে ১৮০০ থেকে ২০০০ মানুষ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু এই ক’দিন তা ভীষণভাবে কমে গিয়েছে। শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “সোমবার মাত্র ৫০-৬০ জন দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। মঙ্গলবারও সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।”
আগে থেকে যাঁরা কাজে এ পারে এসেছিলেন, দেশে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় এখন ফেরার সময় তাঁরা যথেষ্টই আতঙ্কিত। যেমন কুমিল্লার বাসিন্দা আদজালুর রহমান কলকাতা থেকে দেশে ফিরছিলেন। বললেন, “দেশের এমন পরিস্থিতির জন্য বিরোধী দলই দায়ী। অতীতে উন্নয়ন হয়নি। বর্তমান শাসক দল উন্নয়নের কাজ করছে। কিন্তু বন্‌ধ ডেকে হিংসা ছড়িয়ে তা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখন দেশে ফিরছি। তবে জানি না কী ভাবে বাড়ি পৌঁছব। শুনেছি গাড়ি-বাস কিছুই চলছে না।” খুলনা থেকে পেট্রাপোলে এসেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। বললেন, “সপরিবার এসেছি। যাব ঠাকুরনগরে। ও পারে দোকানপাট বন্ধ। বোমাবাজি চলছে। মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই।” তবে বেনাপোলে বন্‌ধের প্রভাব কম বলেই জানালেন সেখানকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ মাসুদ পারভেজ জানলেন, “বেনাপোলে ছোট গাড়ি চলছে। যশোহরের বাইরে প্রভাব রয়েছে যথেষ্ট।” ঢাকায় ফিরছিলেন মহসিন খান। তাঁর কথায়, “কলকাতায় এসেছিলাম চিকিত্‌সার জন্য। চিকিত্‌সার প্রয়োজনে ডাক্তার আরও কয়েকদিন থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী ফোনে জানিয়েছে ওখানকার পরিস্থিতিভাল নয়। তাই দ্রুত ফিরে যাচ্ছি। জানি না বাড়ি পৌঁছতে কি দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।”
সোমবার পেট্রাপোলে সীমান্ত বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকলেও মঙ্গলবার থেকে বন্‌ধের প্রবাব পড়তে শুরু করেছে। এ দিন পণ্য রফতানির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য আমদানির কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন শুভেনবাবু। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “পেট্রাপোল থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢুকছে ঠিকই। কিন্তু ওখানে পণ্য নামানোর পরে যদি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীরা তা না নিয়ে যেতে পারেন তা হলে বাণিজ্যে তার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।” যাত্রী যাতায়াত কম হওয়ায় মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা ও পরিবহণ ব্যবসাও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কার্তিক ঘোষ নামে এক মুদ্রা বিনিময় কারবারী বলেন, “রোজ দু’শোর মতো যাত্রী আমাদের কাছে আসেন। গত তিনদিনে তা নেই বললেই চলে। ব্যবসার ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে।” এই অবস্থায় সকলেই চাইছেন দ্রুত বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.