হাবরার শ্রীনগর এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস ওরফে গাঁজা সঞ্জয় খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রবিবার দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৮ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় খুন সঞ্জয়। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম মুকুল সরকার ও শিবনাথ ওরফে শিবু দাস। শ্রীনগর এলাকায় মুকুলের বাড়ি থেকেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। শিবুর বাড়ি জয়গাছি এলাকায়। তাদের কাছ থেকে দু’টি রিভলভার ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় দু’জন সঞ্জয়কে খুন করার কথা কবুল করেছে। সোমবার ধৃতদের বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতদের আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
সঞ্জয় খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মনতোষ ঘোষ নামে এক দুষ্কৃতী দলের পাণ্ডাই এই খুনের পরিকল্পনা ও ছক করে। কী ভাবে খুন করতে হবে তা মুকুল ও শিবুকে লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন শ্রীনগরে এসে বুঝিয়ে দিয়েছিল সে। কিন্তু কেন সঞ্জয়কে খুন করা হল? পুলিশের বক্তব্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সঞ্জয়ের ছেলে গোপাল ওরফে বাপ্পাকে শ্মশানে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে খুন করে দুষ্কৃতীরা। খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে মনতোষ ও তার দলবলের নাম উঠে আসে। পুলিশের দাবি, পুরনো বিবাদের জেরেই খুন হন বাপ্পা। ডিওয়াইএফের কর্মী হওয়ায় বাপ্পা খুন হওয়ার পরে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে হাবরায় বন্ধ পালনও করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “মনতোষকে গ্রেফতার করতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” |
সঞ্জয় খুন হওয়ার পরে ছেলের খুনের সঙ্গে বাবার খুনের সম্পর্ক রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে সঞ্জয় গাঁজা বিক্রি করত। সেই সূত্রে বিভিন্ন দুষ্কৃতীর সঙ্গে তার যোগ ছিল। ছেলে খুন হওয়ার পরে তার বদলা নিতে তৎপর ছিল বাবা। এমনকী ছেলের হত্যাকারীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশি তদন্ত কতদূর এগোল তা নিয়েও নিয়মিত খোঁজ নিত সঞ্জয়। মুকুল ও শিবুকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, রাস্তায় দেখা হলে সঞ্জয় তাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিত। মনতোষকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বার বার চাপও দিচ্ছিল সঞ্জয়। এ খবর মনতোষের কানে পৌঁছয়। পাছে তাকে খুন করে তাই, তার আগেই সে সঞ্জয়কে খুনের ছক কষে। মুকুল ও শিবু মনতোষের গ্রিলের কারখানার কর্মী। মনতোষের দলবলের অন্যরা জেলে থাকায় এদেরকেই কাজে লাগায় মনতোষ। যার আর একটা কারণ, এর আগে মুকুলের নামে থানায় কোনও অভিযোগ ছিল না। কী ভাবে সঞ্জয়কে খুন করতে হবে তা মুকুল ও শিবুকে বুঝিয়ে দেয় সে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার দিন সকালে সঞ্জয় ভ্যানরিকশায় বাজারে যাচ্ছিল। রাস্তায় তাকে প্রথমে গুলি করে মুকুল। গুলি না লাগায় পরে শিবু আর একটা গুলি করে যা সঞ্জয়ের পিঠ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এরপর ভ্যান থামিয়ে সঞ্জয়ের মাথায় রিভলভার দিয়ে মারে তারা। চলে প্রচণ্ড মারধর। পুলিশের দাবি, পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বড় পাথর দিয়ে সঞ্জয়ের মাথা থেঁতলে দেয় মুকুল ও শিবু।
তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “হাবরার ঘটনায় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আরও যে সব দুষ্কৃতী রয়েছে তাদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।”
|