সুপারিশ দাখিলের পরে পাক্কা দু’মাস পেরিয়ে গেল। উত্তীর্ণ হয়ে গেল তা কার্যকর করার জন্য বেঁধে দেওয়া সময়সীমাও। কিন্তু পুলিশি হেফাজতে এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বাস্তবায়িত করল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
গত ২ এপ্রিল আইন অমান্য করে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুদীপ্ত। পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর অপমৃত্যু হয়। সংবাদ মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে পর দিন, অর্থাৎ ৩ এপ্রিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তদন্ত সেরে ২৭ অগস্ট তারা রাজ্যের কাছে সুপারিশ করে, সুদীপ্তের নিকটাত্মীয়কে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। দু’মাসের মধ্যে সুপারিশটি কার্যকর করতে হবে বলেও তখন কমিশন সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল।
অথচ ক্ষতিপূরণ এখনও মেটানো হয়নি।
|
কেন হয়নি, কমিশনকে চিঠি লিখে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে রাজ্য সরকার। কী রকম?
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার শাখার দেওয়া ওই চিঠির বক্তব্য: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সুদীপ্তের মৃত্যুর তদন্ত করছে। তদন্ত এখনও চলছে। তারা কী বলে, সেটা না-দেখে সরকার রাজ্য কমিশনের করা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ এখনই মেনে নিতে পারছে না। সরকারি ব্যাখ্যা শুনে প্রশ্ন উঠেছে, একই ঘটনা নিয়ে জাতীয় ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশন একই সঙ্গে তদন্ত চালাচ্ছে কী ভাবে?
বস্তুত সরকারি বক্তব্য ঘিরেই বিভ্রান্তি দানা বেঁধেছে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, কোনও ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন এক বার শুরু করে দিলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা অন্য কোনও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন আর তার তদন্ত করতে পারে না। ১৯৯৩-এর মানবাধিকার সুরক্ষা আইনের ৩৬(১) ধারায় এটা স্পষ্ট বলা রয়েছে। সুদীপ্ত-কাণ্ড প্রসঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্তেরও দাবি, “আমরা তদন্ত শুরু করার পর দিনই (৪ এপ্রিল) ফ্যাক্স মারফত জাতীয় কমিশনকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছি। তাই এ সম্পর্কে কোনও অস্পষ্টতা থাকার কথা নয়।”
এবং রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে একমত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। তাদের মুখপাত্র রামধন সোমবার বলেন, “রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চিঠি পেয়ে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু সংক্রান্ত মামলাটি জুলাই থেকেই বন্ধ করেছি। একই ঘটনা নিয়ে একই সঙ্গে দু’তরফের তদন্ত চলছে এটা ঠিক নয়। ওই মামলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্য কমিশনের সুপারিশ মানতে পারছে না, এমনটাও হতে পারে না।”
তা হলে রাজ্য সরকারের এ হেন ‘ব্যাখ্যা’র ভিত্তি কী?
বিষয়টির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক যিনি, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের সেই বিশেষ সচিব মলয় কুণ্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |