ছাত্রনেতার মৃত্যুতে পুলিশকেই দুষল কমিশন
নিজের থেকে তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। আর সেই তদন্তের পরে সোমবার তারা জানিয়ে দিল, এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের (২৩ ) মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গাফিলতিতেই। কমিশনের সুপারিশ, সুদীপ্তের নিকটাত্মীয়কে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। যদিও সরকার এই সুপারিশ মানবে না বলেই মহাকরণ সূত্রের খবর। কারণ, সুদীপ্তের মৃত্যু পুলিশের গাফিলতিতে হয়েছে বলে মনে করে না সরকার।
এপ্রিল ধর্মতলায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আইন অমান্য করে অন্যদের সঙ্গে গ্রেফতার হন নিউ গড়িয়ার শ্রীনগর মেন রোডের বাসিন্দা সুদীপ্তও। পুলিশি পাহারায় বাসে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে মাথায় চোট পেয়ে মারা যান তিনি। পুলিশের দাবি, সুদীপ্ত বাসের পিছনের দরজায় অন্যদের সঙ্গে ঝুলছিলেন। জেলের গেটের সামনে বাসের গতি কমে যায়। তখনই বাতিস্তম্ভে মাথা ঠুকে যাওয়ায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর জখম হন সুদীপ্ত। প্রবল রক্তক্ষরণের পরে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান এসএসকেএম হাসপাতালে।
সুদীপ্তের বাবা প্রণব গুপ্ত।
ছবি : শুভাশিস ভট্টাচার্য
ছাত্রনেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তদন্তের পরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং দুই সদস্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায় জানান, পুলিশি হেফাজতেই ওই ছাত্রনেতার মৃত্যু হয়েছে। কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার দিন বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য সরকারকে দু’মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে বলে সুপারিশে জানানো হয়েছে।”
কমিশন সূত্রের খবর, গত এক বছরে ব্যঙ্গচিত্র -কাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্র থেকে শুরু করে মাওবাদী সন্দেহে ধৃত শিলাদিত্য চৌধুরীকে ক্ষতিপূরণ -সহ কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশই মানেনি সরকার। সুপারিশ কেন মানা যাচ্ছে না, বহু ক্ষেত্রে সরকার তাদের সেটুকুও জানায়নি বলে কমিশনের অনুযোগ।
একই ভাবে কমিশনের দিনের সুপারিশকেও সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় বলে মহাকরণের শীর্ষ কর্তারা জানান। তাঁদের বক্তব্য, সরকার মনে করে, সুদীপ্তের মৃত্যু একটি ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’। পুলিশের গাফিলতির প্রশ্নই ওঠে না। কমিশনকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, “নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর সময় এই কমিশন কোথায় ছিল?”
কমিশনের এই সুপারিশ সরকার মানবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মানবাধিকার কমিশন যে -সব সুপারিশ করেছে, এই সরকার তার একটিও রূপায়ণ করেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (অম্বিকেশ ) বা বেলপাহাড়ির কৃষক (শিলাদিত্য ) , কারও ব্যাপারেই কমিশনের সুপারিশ মানা হয়নি। মানবাধিকার কমিশন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর কী মনোভাব, আমরা তা - জানি !
সুদীপ্তের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পরিবারকে অর্থসাহায্য -সহ সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সুদীপ্তের বাবা প্রণব গুপ্ত বলেছিলেন, তাঁর অর্থসাহায্যের দরকার নেই। তিনি ভিক্ষা নেবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন ছিল, “আপনি কি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন?”
কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে প্রণববাবু বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকা নেব কি না, তা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করব। তবে ছেলের মৃত্যুর ঠিক কারণ জানতে সিবিআই তদন্তের দাবি থেকে সরছি না।”
ঘটনার দিন জেলের সামনে পড়ে গিয়ে আহত হন হোমগার্ড বিশ্বজিত্মণ্ডলও। সুদীপ্তের সঙ্গে বাসে ছিলেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, এসএফআই -কর্মী জোসেফ আজম হোসেন। পুলিশ জানায়, বাসচালক আচমকা ব্রেক কষায় জোসেফও হাতে চোট পান। তাঁকেও তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন।
সুদীপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য জুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে, ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না কেন? বাসে পর্যাপ্ত পুলিশ কেন রাখা হয়নি? কমিশন তদন্তের দায়িত্ব দেয় সংস্থার অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল এল এল ডঙ্গল এবং রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্তকে। তাঁদের রিপোর্টে পুলিশি গাফিলতির কথা বলা হয়। যে -বাসে সুদীপ্তদের নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল, তার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করেন তাঁরা। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে কলকাতা পুলিশের কয়েক জন কর্তা এবং জখম হোমগার্ডের বক্তব্য নথিভুক্ত করে কমিশন। তাদের সুপারিশে বলা হয়েছে, সে -দিন পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। ধৃতদের জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাসও রাখা হয়নি।
কী বলছেন পুলিশকর্তারা?
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “প্রথমে বলা হচ্ছিল, পুলিশ সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কমিশনের সুপারিশে অন্তত এটা প্রমাণিত হল যে, পুলিশ তাঁকে পিটিয়ে মারেনি।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.