শোভাবাজারের কাছে “বাঁচাও, বাঁচাও” চিৎকার করতে করতে চলন্ত ট্যাক্সির দরজা খুলে উঠে বসেছিলেন এক তরুণী। প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও তরুণীর বিপদ আঁচ করে দ্রুত ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন চালক। কিছু দূর চলার পরে কাশীপুর থানা দেখতে পেয়ে সেখানেই নামিয়ে দেন ওই তরুণীকে। থানায় পৌঁছনোর পরে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী পুলিশকে জানান, বেহুঁশ করে সোনাগাছির একটি বাড়িতে তাঁকে ধর্ষণ করেছে তিন যুবক। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
কী হয়েছিল রবিবার?
পুলিশের দাবি, নিউ টাউনের একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করা ওই তরুণী জানিয়েছেন, তিনি আদতে বহরমপুরের বাসিন্দা। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ তিনি নিউ টাউনের চিনার পার্ক বাসস্টপ থেকে বিধাননগর রোড স্টেশনগামী শাট্ল গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে চালক ছাড়াও পিছনের আসনে এক যুবক ছিল। তরুণীর অভিযোগ, ওই যুবক তাঁর পিঠের কাছে হাত রেখেছিল। কিছুক্ষণ পরেই তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, একটি ঘরের বিছানায় তিনি শুয়ে রয়েছেন। তাঁর পাশে শুয়ে বিবস্ত্র এক যুবক। আরও দুই যুবক ওই ঘরের একটি সোফায় বসেছিল। কিছুক্ষণ পরে বিবস্ত্র যুবক তাঁকে ধর্ষণ করে বলে তরুণীর অভিযোগ।
পুলিশের দাবি, ওই তরুণী জানান, ধর্ষণের পরে শৌচাগারে যাওয়ার অছিলায় তিনি ওই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে একতলায় নামেন। তখন সিঁড়িতে যৌনপল্লির কয়েক জন মহিলা ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে যান এবং হাত দেখিয়ে চলন্ত একটি ট্যাক্সিকে দাঁড় করান। ট্যাক্সিতে এক যাত্রীও ছিলেন। ট্যাক্সিতে ওঠার পরে ওই তরুণী তাঁকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সিচালককে অনুরোধ করেন। সিঁথি মোড়ে ওই যাত্রীকে নামিয়ে ট্যাক্সি চালক রাত দশটা নাগাদ তরুণীকে কাশীপুর থানায় নিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতেই তরুণীকে নিয়ে গিরিশ পার্ক থানা এলাকার যোগেশ দত্ত লেনের ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের দাবি, বাড়ির মালিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রে তরুণীর বয়ান মিলছে না। তরুণীর অভিযোগে বেশ কিছু অসঙ্গতিও পেয়েছে পুলিশ। তরুণীর দাবি, গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারান তিনি। প্রায় আট ঘণ্টা জ্ঞান ছিল না তাঁর। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের। তা ছাড়া, অভিযোগ দায়ের করার পরেই যে ভাবে তিনি সোজা ওই বাড়িতে পুলিশকে নিয়ে গেলেন, তা-ও ভাবিয়েছে তদন্তকারীদের। তবে পুলিশ মনে করছে, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলেই এই অসঙ্গতি।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ সোমবার জানান, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণ, গণধর্ষণ এবং ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই তিন যুবকের খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার বলেন, “ওই তরুণী দাবি করেছেন, তিন যুবককে দেখলে তিনি চিনতে পারবেন।” পুলিশ জানায়, তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতে ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা।
এ দিন পুলিশেরই একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, ওই তিন যুবকের এক জন তরুণীর পরিচিত। রবিবার বিকেলে কাশীপুর থানা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁতে ওই তরুণীকে দুই যুবকের সঙ্গে খেতেও দেখা গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। তবে, ওই দুই যুবকই যোগেশ দত্ত লেনের বাড়িতে ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা দাবি করেন, অভিযুক্তদের শনাক্ত করা গিয়েছে। তাদের দু’জনের বাড়ি বিটি রোডে। মদ খেয়ে হুজ্জতির অভিযোগে ওই দু’জনকে গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ ওই রাতেই গ্রেফতার করেছিল। পরে ব্যক্তিগত জামিনে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়। তবে, ওই কর্তা জানান, তরুণী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তারাই ওই দুই যুবক কি না তা এখনও জানা যায়নি।
|