দিন কয়েকের লাগাতার বর্ষণে ছেদ পড়েছে রবিবারই। তবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত অতি বৃষ্টিপাতের ফলে সব্জি চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জেলার সব্জি চাষিদের আক্ষেপ, মাঠেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে লাউ, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, বড়বটি, সিম, মুলো, পালংশাক ও ফুলকপির মতো সব্জি। তাঁদের কথায়, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আগামী বেশ কয়েকদিন বাজারে সব্জির জোগানের স্বল্পতা ও উর্দ্ধমুখী দামের বহর দেখলেই সেটা টের পাবেন ক্রেতারা। শুধু চাষিরা নন। পিলিন ও নিম্নচাপের জোড়া ফলার দাপটে সব্জি চাষের যে ব্যাপক ক্ষতি করেছে মেনে নিয়েছে জেলা কৃষি দফতরও। সংশ্লিষ্ট দফতরের হিসেবে সব্জি চাষে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ।
কৃষি দফতর ও চাষিদের মতে, সব্জি চাষ কমবেশি জেলার সব জায়গায় করা হলেও খয়রাশোলের অজয় ও হিংলো নদীর মধ্যবর্তী চাপলা, মুক্তিনগর, পারুলবোনা, শাল বা ময়ূরাক্ষ্মীর মতো নদী ঘেঁষা গ্রাম পলপাই, পাইগড়া, দুবরাজপুরের লোবা, ইলামবাজার, সিউড়ির খটঙ্গা, ময়ূরেশ্বরের ভগবতীপুর, দুনা, কোটাসুর এবং নলহাটির পানিতার মতো বেশ কিছু জায়গায় সব্জি চাষের রমরামা। এই সব অঞ্চল থেকে শুধুমাত্র জেলা নয়, জেলার বাইরেও সব্জি সরবারাহ করা হয়ে থাকে। খয়রাশোলের মুক্তিনগর ও চাপলা গ্রামের কৃষ্ণ চক্রবর্তী, অনিল ব্যাপারি, নিমাই প্রামাণিক বলছেন, “আমাদের গ্রামগুলি থেকে শুধু মাত্র খয়রাশোল বা দুবরাজপুর নয়, বর্ধামানের পান্ডবেশ্বর, হরিপুর, আসানসোল, দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন বহু সব্জি সরবরাহ করা হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেগুন, বড়বটি, লঙ্কা, লাউ, সিম, ফুলকপি, পালংশাকের মতো বিভিন্ন সব্জির খেতে জল দাঁড়ানোয় সেই সব সব্জি চাষ ব্যাপক হারে মার খেয়েছে। এখনও যে সব সব্জি মাঠে আছে রোদ উঠলে সেগুলিও নুইয়ে পড়বে।” |
বৃষ্টিতে পচছে লাউ। সোমবার খয়রাশোলের মুক্তিনগর গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
নলহাটির পানিতা গ্রামেও ব্যাপক আকারে সব্জি চাষ হয়ে থাকে। সেই সব সব্জি রামপুরহাট, বর্ধমানের আসানসোল এমন কী মুর্শিদাবাদেও যায়। ওই এলাকার চাষি সুকণ্ঠ কর্মকার, বীরেন লেটরা বলছেন, “লঙ্কা, বেগুন, বড়বটি-সহ একাধিক ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ফুলকপির চারাও।” পানিতার আরও এক চাষি নন্দদুলাল মণ্ডল জানিয়েছেন, শুধু সব্জি নয় তাঁর জমিতে লাগানো তুঁত গাছও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলার অন্য চাষিদের মতো প্রায় একই বক্তব্য ময়ূরেশ্বের ভগবতীপুর ও দুনা গ্রামের চাষি সুনীল দাস ও রহিম আলির। উভয়েই জানাচ্ছেন, বর্ষার জলে অন্যান্য সব্জির সঙ্গে ফুলকপির চারা নষ্ট হয়েছে। যেগুলি রয়েছে সেই সব কপি চারার বৃদ্ধি রোধ হয়ে গিয়েছে। এই জন্য ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাঁদের।
চাষিদের বক্তব্য মেনে নিয়েছেন জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল। তিনি বলেন, “পিলিনের সময়ই সব্জি চাষ বড়সড় ধাক্কা খেয়ে ছিল। এরপর নিম্নচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিন যা বৃষ্টি হল, তাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ শতাংশ হবে। এমন কী এ বার জেলার বর্ষাতি পেঁয়াজ চাষও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হল। গ্রীষ্মকালে (লঙ্কা, লাউ, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ ইত্যাদি) যে সব সব্জি চাষ হয়েছে সেগুলিকে আর নতুন করে দাঁড় করানো সম্ভব নয়, যদি সেগুলি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে। তবে শীতকালীন সব্জিগুলিকে (ফুলকপি, সিম, পালং ইত্যাদি) ফের চাষ করা যেতে পারে। তবে শর্ত একটাই এর পর আবহাওয়া ভাল থাকতে হবে। রোদ উঠলেও মাঠে থেকে যাওয়া সব্জির বিপদ কিন্তু কাটছে না। কারণ, এই সময় সব্জিখেতে রোগের আক্রমণ ঘটার সম্ভবনা খুবই বেশি।”
সব্জির পাশাপাশি ধানচাষও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন, জেলা উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপকুমার মণ্ডল। তিনি জানান, অতি বৃষ্টির জন্য নানুরের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, দুবরাজপুর ও খয়রাশোল মিলিয়ে ২২০০ হেক্টরের মতো জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে জেলার ৬০০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের যে চাষ হয়েছিল, সেই সব জমির ধানের একটা অংশ বৃষ্টির জন্য ঘরে তুলতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়বে বলে জানাচ্ছেন প্রদীপবাবু। |