ছোটবেলায় গ্রামের পুজো মণ্ডপে বিভিন্ন মূর্তি গড়া দেখে প্রতিমা শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল। তাতে বাদ সেধেছিল প্রতিবন্ধকতা। সেই সব বাধা উপেক্ষা করে মূর্তি গড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন লাভপুরের বিপ্রটিকুরির বাসিন্দা সুকুমার হাজরা।
ছোটবেলা থেকেই সুকুমারবাবুর একটি পা পোলিও আক্রান্ত। আর্থিক অবস্থার কারণে পড়াশুনো বেশি দুর এগোয়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে খেলাধুলোও বিশেষ একটা করা হয়নি। বেশির ভাগ সময় কেটেছে গ্রামের মণ্ডপে বিভিন্ন শিল্পীর নানা মূর্তি গড়া দেখে। দেখতে দেখতে মনের মধ্যে প্রতিমা শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে জাগে তাঁর। ওই সব শিল্পীদের সঙ্গে মাটি তৈরি করা বা রং গোলার কাজ করতেন। ধীরে ধীরে মূর্তি গড়ায় হাত পাকালেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না বলে বেশি উচ্চতার মূর্তি গড়তে পারেন না তিনি। তাই বড়দের কাছে ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন ওই প্রতিবন্ধী শিল্পী। |
প্রতিমা শিল্পী সুকুমার হাজরা। —নিজস্ব চিত্র। |
বরং ছোট আকৃতির মৃর্তি গড়ে কচি-কাঁচাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সুকুমারবাবু। দুর্গাপুজোর পর থেকেই তার মরসুম শুরু হয়ে যায়। সংলগ্ন গ্রাম থেকে খুদেদের দল হাজির হয় তাঁর বাড়িতে। কার্তিক, সরস্বতী, কালী মূর্তি গড়ার জন্য তারা বায়না দিয়ে যায়। ১৫০-২০০ টাকা দামের দেড়ফুট ও দু’ফুট উচ্চতার মূর্তি গড়ে দেন শিল্পী। ছোট আকৃতির ওই সব মূর্তির নামকরণ বেশ মজাদার। ‘ছা-কালী’, ‘খোকা-কার্তিক’ হিসেবে চিহ্নিত। সব মিলিয়ে সারা মরসুমে শতাধিক মূর্তি গড়েন সুকুমারবাবু। তাঁর কথায়, “যা পারিশ্রমিক পাই, তাতে পেট ভরে না ঠিকই। তবে ছোটদের হাসি মুখগুলো দেখে মন ভরে যায়। এক জন শিল্পীর কাছে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে।”
আর কচিকাঁচারা স্থানীয় ইন্দাসের পঞ্চম শ্রেণির সুমন্ত মণ্ডল, বিপ্রটিকুরির চতুর্থ শ্রেণির রমেশ দাসদের কথায়, “আমাদের তো বড়দের মতো চাঁদা ওঠে না। তাই ছোট আকৃতির ঠাকুর গড়ার বায়না নিতে চায় না বড় প্রতিমা গড়ার শিল্পীরা। কাকু আমাদের খোকা-কার্তিক, ছা-কালী গড়ে দেয় বলে আমাদের পুজো হয়।” |