তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামলেন তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ। সোমবার দুপুরে মুরারই ১ ব্লক অফিসের ঘটনা। ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ওই কর্মসূচিকে নেতৃত্ব দিলেন এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি আবুল কালাম। অবশ্য এ দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে মুরারইয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও খানিকটা প্রকট হয়ে পড়েছে। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি দলীয় নেতৃত্বকে না জানিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ায় নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ দলের বর্তমান ব্লক সভাপতিই।
এ দিন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিডিও-কে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে একাধিক বেনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন আবুল কালাম। তাঁর দাবি, “দুর্গাপুজোর সময় এলাকায় ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করে রাস্তায় পাথরগুঁড়ো বিছানোর কাজ হয়েছে। কিন্তু নিয়ম মোতাবেক কোনও দরপত্র না ডেকেই এই বিপুল পরিমাণ টাকার কাজ করানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কনকপুর এলাকায় গাছ লাগানোর জন্য সরকারি হিসেবে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে দেখানো হলেও বাস্তবে এখনও পর্যন্ত একটিও গাছ লাগানো হয়নি।” দু’টি ক্ষেত্রেই তাঁরা বিডিও-র কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেv। এ ছাড়াও আন্দোলনকারীরা দুর্নীতিমুক্ত বিপিএল তালিকা তৈরি করা এবং এলাকার স্বনির্ভর দলগুলি নিয়ে ব্লক প্রশাসনকে সদর্থক পদক্ষেপ করার দাবিও জানিয়েছেন।
যদিও মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কংগ্রেসের ধীমান সাহা অভিযোগগুলির কোনও ভিত্তি নেই বলেই পাল্টা দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “২৩ লক্ষ টাকা খরচ করার যে কথা বলা হচ্ছে, তা একেবারেই ভুল। জরুরি ভিত্তিতে পুজো ও ইদ উপলক্ষে কিছু খারাপ রাস্তায় ডাস্ট ফেলা হয়েছিল। সেই কাজের খরচ বড়জোর ৪ লক্ষ টাকা। এবং উপযুক্ত ঠিকাদারদের দিয়েই তা করানো হয়েছে। এই সামান্য কাজের জন্য দরপত্র ডাকার প্রয়োজন নেই।” এমনকী, কনকপুর এলাকায় গাছ লাগানোর কাজও ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন। অন্য দিকে, মুরারই ১ বিডিও আবুল কালামের দাবি, “কোথায় কারা পাথরের গুঁড়ো ফেলেছে, আমার জানা নেই। তবে গাছ লাগানোর কাজটি এখনও চলছে। প্রকল্প অনুযায়ী কাজ না হলে, সরকারি বিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন বিডিও বাকি দাবিগুলিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ দিকে এই ঘটনায় দলেরই প্রাক্তন ও বর্তমান ব্লক সভাপতির মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। যার পিছনে বিরোধীরা অবশ্য গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বেরই গন্ধ পাচ্ছেন। এ দিনের কর্মসূচির জন্য আবুল কালাম দলীয় নেতৃত্বের কোনও অনুমতি নেননি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের বর্তমান ব্লক সভাপতি বিনয় ঘোষ। তাঁর ক্ষোভ, “স্মারকলিপি দেওয়ার আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অন্তত জানানো উচিত ছিল।” পাল্টা দাবি করেছেন আবুল কালামও। তাঁর যুক্তি, “দলীয় নেতৃত্বের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল ঠিকই। তবে তাঁরা যে কিছুই জানতেন না, তা-ও তো নয়। এ দিনের কর্মসূচির কথা তাঁরা রবিবারই টের পেয়েছিলেন। তখন কেন নিষেধ করেননি!” |