বৃষ্টিতে ফসলে মার, মাথায় হাত চাষিদের
প্রথমে পিলিন। সেটা যেতে না যেতেই নিম্নচাপ। এই দু’য়ের প্রভাবে অক্টোবরের শেষেও যে ভাবে বৃষ্টিপাত চলছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়, তাতে ধান ও সব্জি চাষের যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। ফলে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। চিত্রটা ভিন্ন নয় খয়রাশোলের চাষিদের ক্ষেত্রেও।
সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি অজয় এবং হিংলোর এই দুই নদীর মধ্যে থাকা খয়রাশোলের মুক্তিনগর, চাপলা, বিলাতি, পারুলবোনা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের। দু’টি নদীর মধ্যবর্তী হওয়ার জন্য এখানকার মাটি চাষের জন্য যতটা আদর্শ, তেমনই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নীচু জমিতে জল জমে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাটাও একই রকম থাকে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ধান ও সব্জি চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি চাষিদের। মুক্তিনগর ও চাপলা গ্রামের সুধীর ব্যাপারি, রায়মোহন রায়, নরহরি সর্দার, বাপি প্রামাণিক, নিশিকান্ত সরকাররা বলছেন, “আমাদের গ্রামগুলি থেকে শুধুমাত্র খয়রাশোল বা দুবরাজপুর নয়, বর্ধমানের পান্ডবেশ্বর, হরিপুর, আসানসোল, দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন বহু সব্জি সরবরাহ করা হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেগুন, বড়বটি, লঙ্কা, লাউ, সিম, ফুলকপি, পালংশাকের মতো বিভিন্ন সব্জির খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে এই সব সব্জি চাষ ব্যাপক হারে মার খেয়েছে। এখনও যে সব সব্জি মাঠে আছে, রোদ উঠলে সেগুলিও নুইয়ে পড়বে।”
জলে ভাসছে কাটা ধান। রবিবার খয়রাশোলের মুক্তিনগরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
শুধু সব্জি নয়, বহু জমির ধান মাঠেই পচে গিয়েছে। চাষিদের কথায়, বছরে ভাতের চালের জোগানের জন্য যে চাষ, সেই ধান মাঠে মরে যাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। দু-চার দিন জল জমলেই কী ধান নষ্ট হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে চাষিরা জানান, যেহেতু সব্জি চাষ এলাকার প্রধান অর্থকরী চাষ, এই কথা মাথায় রেখে যত কম সময়ে ধান চাষ করা যায় সেই পথেই হেঁটেছেন এলাকার অধিকাংশ চাষি। কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে উচ্চ ফলনশীল ধান ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে লাগিয়েছেন। ফলনও যথেষ্ট হয়েছিল। ধান কাটার সময়ও হয়ে এসেছিল। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি বহু জমির ধান নষ্ট করেছে। পচে গিয়েছে খড়ও।
চাষিদের এই বক্তব্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন খয়রাশোলের সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত আচার্য। তিনি বলেন, “যাঁরা প্রথাগত চাষ করেন সেই সব ধানের ফলন সবে শুরু হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে বৃষ্টি ততটা সমস্যা করতে পারবে না। কিন্তু সেখানে উচ্চ ফলনশীল ধান প্রায় পরিমিত হয়ে এসেছিল, এমন সময় অধিক বৃষ্টি অবশ্যই ক্ষতিকারক। তবে মোট কত জমির ফসল নষ্ট হয়েছে সেই হিসেব করতে সময় লাগবে।”
রবিবার সকালে মুক্তিনগরে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু ধান জমিতে জল জমে রয়েছে। জল জমে থাকা মাঠ থকে যদি কিছুটা ধান উদ্ধার করা যায়, তার চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। কিছু ধান পচে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে একের পর এক সব্জি খেতও। ফুলকপির চারাগুলির কিছু অংশ নষ্ট হলেও বকি রক্ষা পেয়ে যাবে বলেই মনে হল। তবে চাষিদের কথায়, যেহেতু বহু সময় ধরে জল ছিল সব্জি খেতে, কড়া রোদ উঠলে সেই সব কপিচারা পচে যাবে।
সব্জি চাষ প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল বলেন, “স্বল্প সময় সব্জি খেত জলে ডুবে থাকলেই তা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে গ্রীষ্ম কালের পর থেকে লঙ্কা, লাউ, বেগুন ঢ্যাঁড়শের মতো সব্জি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলিকে নতুন করে দাঁড় করানো কঠিন। তবে ফুলকপি, সিম, পালংশাকের মতো শীতকালীন সব্জিকে দিন কুড়ির মধ্যে আবার নতুন করে চাষ কারা যেতে পারে। তবে শর্ত একটাই এর পর আবহাওয়া ভাল থাকতে হবে।” শীতকালীন সব্জি চাষ নিয়ে কৃষি দফতর কিছুটা আশার কথা শোনালেও চাষিদের মতে, চাষের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে সেটা কখনও ফেরত পাওয়া যাবে না। ক্ষতি পূরণ করতে তাই পরের মরসুমই ভরসা। তবে চাষিরা চাইছেন এখন যেন আর বৃষ্টি না হয়। তা হলে রবি চাষও মার খেতে পারে বা বিলম্বিত হতে পারে। চাষিদের আশঙ্কা, খড় পচে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্য জোগাতে সমস্যায় পড়তে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.