জেলাজুড়ে বিরোধী দলগুলিতে ভাঙন অব্যাহত। শাসক দলে যোগ দেওয়ার এই হিড়িকে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেসই। শনিবার সন্ধ্যাতেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যামসুন্দর কোনার। অন্য দিকে, রবিবার কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মুরারইয়ে দল ছাড়লেন কয়েক হাজার কর্মী। তৃণমূলের দাবি, প্রায় ৬ হাজার কংগ্রেস ও বাম কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শনিবারই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন নলহাটি ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি এমদাদুল হকও। ইতিমধ্যেই দল বদলের ফেরে কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে চলেছে সাঁইথিয়া পুরসভ। আবার সদ্য দুবরাজপুরের পুর ভোটে তৃণমূলের জয়ের নেপথ্যে পুরপ্রধান-সহ দলীয় কাউন্সিলরদের রং বদলকেই দায়ী করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বের অনেকেই।
দীর্ঘদিন ধরে বোলপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি থাকা শ্যামসুন্দরবাবু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা ছিলই। সম্প্রতি বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি সাংবাদিক বৈঠকেও শ্যামসুন্দরবাবুকে অনুব্রতর পাশেই দেখা গিয়েছিল। শনিবার শ্যামসুন্দরবাবু ছাড়াও কংগ্রেসের বহু কর্মী-সমথর্ক আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “শ্যামসুন্দরবাবু থাকলে, দল আরও সমৃদ্ধ হবে।” শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “তৃণমূলে যোগ দিয়ে উন্নয়নে থাকতে চাই।” কংগ্রেসের বোলপুর ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন অবশ্য বলেন, “কেউ অন্য দলে যেতেই পারেন। মনে হয়, বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।”
মুরারই কংগ্রেসে ভাঙনের বিষয়টি স্পষ্ট হয় রবিবার বিকেলে ভীমপুর গ্রামে তৃণমূলের জনসভায়। সেখানে কংগ্রেস, সিপিএম ও ফব থেকে প্রায় ৬ হাজার কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিলেন বলে দলীয় নেতৃত্বের দাবি। অনুব্রত ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য। এ দিন প্রায় হাজার দশেক কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত বললেন, “মুরারই বিধানসভায় কংগ্রেস বলে আর কিছু রইল না। আগামী দিনে তৃণমূলই এখানে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে।” ওই জনসভাতেই সবাইকে চমকে দিয়ে তৃণমূূলে যোগ দিলেন মুরারই ২ ব্লকের কংগ্রেস নেতা আবু বাক্কার (প্রাক্তন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি), কুরবান শেখ, প্রশান্ত সাহা, অনন্ত মজুমদার। দল ছাড়ার পিছনে প্রত্যেকেরই যুক্তি, “কংগ্রেসে এখন সঠিক পথ দেখাবার নেতা নেই।” এ দিনই সাঁইথিয়াতেও পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য-সহ এলাকার কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএম ও ফব ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন নানুরের তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরা। স্থানীয় দেড়িয়াপুর ও হরিসড়া পঞ্চায়েতের ওই সদস্যদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁরা দল পাল্টালেন। তবে সিপিএমের সাঁইথিয়া জোনাল সম্পাক জুরান বাগদি বলেন, “কেউ কেউ নীতিভ্রষ্ট হয়ে কিংবা তৃণমূলের হুমকিতে দল ছাড়ছেন বলে শুনেছি। তবে এ নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে শনিবারই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুরারই ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি পদে থাকা আব্দুর রহমান। জেলা নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুরারইয়ের বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলিও। আশরাফ কংগ্রেসের সাধারণ কর্মী হিসেবেই থাকতে চান বলে জানিয়েছেন। তবে জেলা তণমূল নেতৃত্বের দাবি, আব্দুর রহমানের তৃণমূলে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা। আব্দুর রহমান অবশ্য এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলায় কংগ্রেসের এমন অবস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। তবে আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, “সর্বত্রই শাসক দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা চলছে। বীরভূমও তার ব্যতিক্রম নয়।” সিপিএম জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় ও ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় দু’জনেরই দাবি, কারও দল ছাড়ার খবর তাঁদের জানা নেই।
|
নির্যাতন রুখতে আলোচনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
‘পারিবারিক হিংসা আইন’ নিয়ে একটি আলোচনা হল বোলপুরে। রবিবার তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে জেলার একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকেও বহু পুরুষ ও মহিলা প্রতিনিধি এসেছিলেন। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল পারিবারিক হিংসা আইন সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা। পাশাপাশি নারী নির্যাতন রুখতে নানা বিষয় নিয়েও সেখানে আলোচনা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের ডিস্ট্রিক্ট প্রোটেকশন অফিসার আইভি আচার্য। এখনও বহু মানুষই ‘পারিবারিক হিংসা আইন’ সম্পর্কে অবহিত নন। নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক সমস্যার সমাধান থাকলেও বহু ক্ষেত্রেই শুধু মাত্র সচেতনতার অভাবেই তা রোখা যায় না। ফলে অনেক নির্যাতিতাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, কখনও বা তাঁদের পরিকল্পিত ভাবে খুনও করা হয়। |