সামনেই পরীক্ষা, বই-খাতা সরিয়ে পড়ুয়া পড়ে প্রদীপে
স্কুল খুললেই পরীক্ষা। তার আগেই দীপাবলি। তাই পরীক্ষার পড়ার সঙ্গেই প্রদীপ বানাতে ব্যস্ত লক্ষ্মী, পুর্নিমা, অনিতা, অর্পিতা, জয়ন্তরা। সকলেরই বয়স কমবেশি ৬ থেকে ১৮। কেউ প্রথম শ্রেণিতে কেউ বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কালীপুজো এবং দীপাবলির বেশি দেরি নয়, তাই বাড়ির বড়দের সঙ্গে তারাও হাত লাগিয়েছে। পড়ার ফাঁকে সময় খুঁজে প্রদীপ বানালেও তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্নে প্রথাগত কুমোর পেশা নেই। সকাল থেকে মাটি মেখে প্রদীপ তৈরি, রোদে শুকোতে দেওয়া নিয়ে আপাতত ওরা মেতে। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের পাল পাড়ার শিল্পীরা জানালেন, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ অনেক। ছেলে মেয়েরা হাত লাগালে বেশি সংখ্যক প্রদীপ তৈরি করা সম্ভব হয়। আয়ও হয় বেশি। পালপাড়ার জয়ন্ত এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তার কথায়, “পরীক্ষা ও পুজো দুটোই সামনে। ভোরে উঠে পড়াশোনা করে দুপুরে মায়ের সঙ্গে বসে প্রদীপ বানাই।” অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা প্রদীপের পাশাপাশি হাড়িও বানাতে পারে। পুজোর ছুটির জন্য স্কুল বন্ধ। দুপুর হলেই কুমোরের চাকায় হাত ঘুরিয়ে প্রদীপ তৈরি করতাই এখন অর্পিতার আনন্দ। অর্পিতা বলেন, “মায়ের থেকে প্রদীপ বানাতে শিখেছি। এখন বেশ ভালই বানাতে পারি। তাই সম। পেলেই কাজে লেগে যাই। ভালই লাগে।”
লক্ষ্মী এবং পূর্ণিমা দুজনেই প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। প্রদীপে রং করতেই ওদের উৎসাহ। তুলি হাতে লাল, খয়েরি, হলুদ রং লাগাচ্ছে প্রদীপের গায়ে। তুলি থেকে ওদের হাতে, গালে, কানেও, লাল-হলুদে মাখামাখি। ইসলামপুরের পালপাড়ায় গেলে ক্ষুদেদের এমন উৎসাহই চোখে পড়বে। বড়দের সঙ্গে সমান পাল্লা দিচ্ছে ওরাও। তবে পালপাড়ার বড়দের মুখে কিন্তু অনিশ্চয়তার ছাপ। জয়ন্তর মা নয়নতারা পাল বলেন, “এক ট্রাক মাটি কিনতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা, জ্বালানির দামও বেড়েছে। সে তুলনায় প্রদীপের দাম কমেই চলেছে। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না।” গোলক পাল, গোবিন্দ পালেরাও জানায়, “প্রদীপেরও উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না। বাজার খবর খারাপ।” একসময়ে পালপাড়ায় ৪০টি পরিবার এক সময় মাটির কাজ করলেও বর্তমানে ১০টি পরিবার সেই কাজ করে। বাকিরা পেশা বদলে নিয়েছেন। ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, “শিল্পীদের স্বল্প সুদে ঋন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। পালপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তারা যাতে স্বল্প খরচে কাজ করতে পারেন সেটি দেখা হবে।”
তবে খুদেরা অবশ্য সে সব নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নয়। তাঁরা অবশ্য শিক্ষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। জয়ন্তের কথায়, “পড়াশোনা শেষ করে ইঞ্জিনিয়র হতে চাই। তার প্রস্তুতি নেব। তবে ফাঁক পেলে অবশ্যই প্রদীপ গড়ব।” অর্পিতার কথায়, “বড় হয়ে শিক্ষক হব। বাড়িতেও বলেছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.